স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সোহরাব হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবনসহ ৩১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন বাগেরহাটের একটি আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একজনকে মৃত্যুদন্ড, একজনকে যাবজ্জীবন এবং অপর ২৯ আসামিকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পর বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। এসময় মামলার ৩২ আসামির মধ্যে ২৬ জন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
২০০১ সালে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার গাজিরহাট গ্রামের বাসিন্দা সোহরাব হোসেনকে (৪০) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যার করে তার প্রতিপক্ষরা।
আদালত মৃতুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি আতহার আলী ওরফে পরান বাবু এবং যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ পাওয়া আব্দুর রশিদকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন। এছাড়া মামলার ২৯ আসামিকে ১৪৭ ধারায় দুই বছর এবং ১৪৮ ধারায় তিন বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। ওই দুই ধারায় তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৫ মাস করে কারাদন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালত রায়ে বলেছেন, উক্ত দণ্ড একটির পর অপরটি কার্যকার হবে। আসামিদের এই মামলার পূর্বেকার হাজত বাস উক্ত সাজা থেকে বাদ যাবে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পরান বাবুর বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা গ্রামে।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন, সিদ্দিকুর রহমান, হান্নান, রবিউল শিকদার, রাজ্জাক শিকদার, বাবুল হাওলাদার, আব্দুর রব শেখ, আব্দুল করিম শেখ, খলিল শেখ, হাদিস গাজী, মোজাহার গাজী, আনোয়ার হাওলাদার, কালা বাবুল, দিপু ওরফে দিপংকর, আব্দুল হাকিম, হেমায়েত, রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রব শিকদার, ফরহাদ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুল ওহাব, গোলাম ফারুক, বাবুল হাওলাদার, পিকলু সরদার, শুক ওরফে সুলতান, মাসুদ শেখ, তরিকুল ইসলাম, মোজাহার ওরফে মোতাহার গাজী, আসাদ শেখ ও আজাহার ওরফে মোজাহার তরফদার। তাদের সবার বাড়ি বাগেরহাট ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে বলে জানা গেছে।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে ২০০১ সালের ১৮ জুন সকাল ১০টার দিকে পরান বাবু এবং ইউসুফ আলীর নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি সশস্ত্র দল গাজিরহাট গ্রামের সোহরাব আলীর বাড়িতে যায়। তারা বাড়িটি ঘিরে সোহরাবসহ তার পরিবারের সদস্যদের অবরুদ্ধ করে। এক পর্যায়ে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আসামিরা সোহরাব হোসেনকে ধাওয়া করে এবং গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে। সেই সময় আসাসিরা বোমার বিস্ফোরন ঘটায় বলেও মামলার নথিতে উল্লেখ আছে।
নিহতের স্ত্রী কহিনুর বেগম দাবি হয়ে ওই দিনই মোড়েলগঞ্জ থানায় ২৬ জনেরে নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক মো. রেজাউল ইসলাম ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর ৩৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এ্যাডভোকেট সীতা রাণী দেবনাথ। তিনি বলেন, মামলার দীর্ঘ শুনানীতে আদালত ১১ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য ও অনান্য তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে এই রায় দিয়েছেন। মামলা চলাকালে অভিযুক্তদের একজন মারা যাওয়ায় তাকে এই মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। বাকি ৩২ আসামির একজন খালাস পেয়েছেন।
‘মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবনসহ মামলার ৩১ আসামিরই সাজা হয়েছে। এই রায়ে দীর্ঘ ১৮ বছর পর স্বামী হারা এক বিধনা নারী ন্যায় বিচার পেলেন।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাডভোকেট এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু। তারা উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানিয়েছেন।
এইচ//এসআই/বিআই/১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮