স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে চলছিল আন্দোলন
অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে বাগেরহাট ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
একই সাথে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন কতৃপক্ষ।
এদিন দুপুর ১টার কিছু পর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে পুলিশ। এসময় ওই খবর শুনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
ক্যাম্পাস বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে অপসারণ না করে ওই নির্দেশনার মাধ্যমে কর্তিপক্ষ ‘দুর্নীতিকে প্রচ্ছয়’ দিচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের মত এদিন শিক্ষক-কর্মচারীরাও প্রকাশে অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের নানা অনিয়ম দুর্নীতির কথা বলেন। অধ্যক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির ১৮টি অভিযোগ তুলে ধরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রনালয়ে একটি অবহিতকরণ পত্র পাঠায় শিক্ষক-কর্মচারীরা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার দড়াটানা নদী সংলগ্ন চিতলী বৈটপুরে ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করে ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি)। প্রায় দুই বছর ধরে এখানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আছেন প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম।
তার অপসারণ ও নতুন অধ্যক্ষ পদায়নের দাবিতে চতুর্থ দিনের মত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। সব ধরণের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ওই দাবিতে রোববার রাত থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন।
ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী উম্মে কুলসুম বলেন, একজন দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের কারণে চারশ শিক্ষার্থী অভিষ্যত নষ্ট হতে চলেছে। নানা অজুতাতে তিনি আমাদের উপবৃত্তির টাকা কেটে রাখতেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী রাজিউল হাসান বলেন, আমরা ওই অধ্যক্ষকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করছি। তিনি যতদিন এই প্রতিষ্ঠানে থাকবেন আমাদের আন্দোলন চলবে।
হোস্টেলে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, হোস্টেল কক্ষ শিক্ষার্থীদের না দিয়ে বাইরের লোকের কাছে ভাড়া দেওয়া, টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী ভর্তি, সরকারি এক লাখ ৮৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্যাসের বিল জন্য জোর পূর্বক টাকা আদায়, হলের পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ না দিয়েও কাগুজে লোক নিয়োগ দেখিয়ে প্রতিমাসে টাকা উত্তলনসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ বেশ ক’দিন ধরে আন্দোলন করছিলেন শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিলিপ সরকার ও অনিমা গাইন বলেন, চার হাজার দুইশ টাকা বেতনে এখানে চাকরি করি। স্যার আমাদের ওই টাকার জন্য স্বাক্ষর করিয়ে মাত্র ৩ হাজার টাকা দিত। ফেলে দেওয়া পানির বোতল নিয়ে বিক্রি করেও সেই টাকার ভাগ নিতেন তিনি।
আইএমটি’র সতজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতার কাজ করিয়ে বিল তুলে টাকা আত্মসাৎ করতেন ওই অধ্যক্ষ। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট বিল এমন কী পরিচ্ছন্নতা কর্মীর টাকা আত্মসাৎ করতেন। তার এসব কর্মকান্ডের কারণে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রথমে হল ছাড়তে রাজি না হলেও বিকাল সোয়া ৫টার পর তার হল ছাড়তে শুরু করে। এর আগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা তাদের ক্যাম্পাস ত্যাগে সময় দেই।
তবে অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এইচ//এসআই/বিআই/১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
** অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ-কুশপুত্তলিকা দাহ