স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
• প্রায় দুই বছর ধরে প্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে
• তাঁর অপসারণ দাবিতে দুদিন ধরে ক্যাম্পাস উত্তাল
• ক্লাস বর্জন করে লাগাতার আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
• মঙ্গলবার পুলিশ নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন তিনি
বাগেরহাটের ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির (আইএমটি) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মত আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাে. সিরাজুল ইসলামের অপসারণ ও নতুন অধ্যক্ষ পদায়নের দাবিতে মঙ্গলবারও (১৩ ফেব্রুয়ারি) ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে শ্রেণিকক্ষ ও অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। দফায় দফায় বিক্ষোভ আর অধ্যক্ষ বিরোধী স্লোগানে ক্যাম্পাস উত্তাল রাখে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানের প্রধানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে রোববার রাত থেকে আন্দোলন করছেন শিক্ষর্থীরা। সোমবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অধ্যক্ষ্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষের প্রবেশ ঢেকাতে মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রধান ফটকে সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারীরা। অবশ্য দুপুরের পর পুলিশের সহায়তায় তিনি প্রতিষ্ঠানে আসেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সদর উপজেলার চিতলী বৈটপুর এলাকায় অবস্থিত মেরিন ইন্সটিটিউটের প্রায় দুই বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন সিরাজুল ইসলাম। দির্ঘদিন ধরে হোস্টেলে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে টাকা আত্মসাত করে আসছেন তিনি। ভর্তি বাণিজ্যের পাশাপাশি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ না দিয়ে, টাকার বিনিময়ে বাইরের লোকদের কাছে ভাড়া দেন তিনি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী খালিদ হাসান বাপ্পি বলেন,‘আমরা বাধ্য হয়ে আজ আন্দোলনে নেমেছি। তার সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা কারণে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছি। দুর্নীতিবাজ ওই অধ্যক্ষের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’
গ্যাসের বিল প্রদানের জন্য সরকারি বাজেট থাকা সত্বেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক অতিরিক্ত টাকা আদায়, অভিভাবক হয়রানি, রশিদ ছাড়া বিভিন্ন খাতে টাকা আদায়সহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের বিরুদ্ধে ১৭টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট আইএমটি একজন শিক্ষক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এখানের বিষয়গুলো এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। দির্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম আর শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই অধ্যক্ষের অধিনেই কোন শিক্ষার্থীই এখন একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে চাইছেন না।’
বিষয়টি সমাধানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামকেই এখন দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
সূত্র বলছে, বিদেশীদের চাহিদা মোতাবেক এবং যুগের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে সরকার দেশের ৬টি আইএমটি প্রতিষ্ঠা করে। এর কার্যক্রম চলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে। প্রতিষ্ঠানের অচলবস্থা ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে চলা চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি জানানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তিপক্ষকেও।
আইএমটির মেরিন ইনস্টেক্টর অভিষেক সরকার বলেন, একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটক তালা দিয়ে আটকে রেখেছে আন্দোলনকারীরা। আমরা তাদের অনেক বুঝিয়েও ক্লাসে ফেরাতে পারিনি।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, অধ্যক্ষ সহযোগীতা চাওয়ায় পুলিশ গিয়ে ইন্সটিটিউট প্রধান ফটকের তালা খুলিয়ে দিয়েছে। অধ্যক্ষের কক্ষও তালাবদ্ধ ছিল।
‘আমরা তালা খুলিয়ে দিয়েছি। তবে শিক্ষার্থীরা তাকে (অধ্যক্ষ) মেনে নিচ্ছিল না। আমি অধ্যক্ষের সাথে বসার জন্য ডাকলেও শিক্ষার্থীরা আগ্রহ দেখায়নি। ওই সমস্যা তাদের অাভ্যন্তরিন, তারাই তা সমাধান করবেন।’
এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে অধ্যক্ষ মাে. সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য গতকাল তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে অস্বিকার করেছিলেন।
এইচ//এসআই/বিআই/১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
** অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে বিক্ষোভ-কুশপুত্তলিকা দাহ