স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হেপী বড়ালের মেয়েকে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করেছে।
শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাগেরহাট শহরের শালতলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নারী সংসদ সদস্যের মেয়ে অদিতি বড়াল (২৬) রাজধানী ঢাকার লন্ডন কলেজ অব লিগ্যাল স্টাডিজে থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে বিকালে মহিলা ক্রিড়া সংস্থা আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে শহরের যোগ দিতে মায়ের সাথে শালতলাস্থ আমলাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ জানায়, অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বাড়িতে ফেরার সময় অজ্ঞাত এক যুবক তার পেটে ছুরি দিয়ে টান দেয়। তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আট মাস আগেও অদিতি বড়ালের উপর একবার হামলার ঘটনা ঘটে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অদিতি বড়াল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমলাপাড়া স্কুলে থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে যাবার সময় এক যুবক এসে আমাকে প্রশ্ন করে যে, আপনি কি হেপী বড়ালের মেয়ে। এরপর হ্যাঁ বলার সাথে সাথে ওই যুবক ছুরি দিয়ে আমার পেটে টান দিয়ে পালিয়ে যায়।
আমার বাবাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। মা আমাদের তিনবোনকে আগলে রেখেছেন। মা ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। মাকে হারা হতে চাইনা। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমি আমার মা ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
খবর পেয়ে বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর শওকাত আলী বাদশা, জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস, পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়সহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তা এবং দলীয় নেতৃবৃন্দ সন্ধ্যায় তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান।
তবে এঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে আটক করতে পারেনি।
অদিতি বড়ালের বাবা সাবেক চিতলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কালিদাস বড়াল ২০০০ সালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন।
ঘটনাস্থলের পাশে থাকা রিকসা চালক মো. মনিক খান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘শলতলা মোড়ের কাছে নিজেদের গাড়ির কাছে গিয়ে আম্মু আম্মু বলে রাস্তার পশে পড়ে যান ম্যাডাম। এ দেখে আমি ছুটে যাই এবং পেটের কাছে রক্ত দেখি। তখন আমি আমার গামছা দিয়ে বেঁধে ম্যাডামকে গাড়িতে তুলে দেই।
সংসদ সদস্য হেপী বড়াল বলেন, আমি এবং আমার বড় মেয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শহরের আমলাপাড়া স্কুলে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠান শেষ হবার কিছু আগে আমার মেয়ে বাড়ি যেতে চাইলে আমি আমার গাড়ির চালককে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে বলি। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে যাবার সময় আমার মেয়েকে ছুরি মারা হয়।
তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি। দলের কোন গ্রুপিং এর মধ্যে আমি নেই। আমার মেয়ে কোন ধরণের রাজনীতির সাথে জড়িত নেই। আমার স্বামীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। আমি সাংসদ হওয়ায় দলের অনেকেই তা ভাল ভাবে নিতে পারেনি। একারনেও আমার মেয়ের উপর হামলা হয়ে থাকতে পারে।
হেপী বড়াল বলেন, আমার স্বামীকে শহরের সাধনার মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালে আদালত সেই মামলার রায় দেয়। তার হত্যাকারীদের সাজা হওয়ায় আসামীরা ক্ষুব্দ। তারা আমাদের সব সময় হত্যার পরিকল্পনা করে আসছে।
প্রায় আট মাস আগে বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আমার মেয়ের উপর হামলা চালিয়েছিল। ওই সময়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। পুলিশ ওই সময়ে অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করেনি। আমি ও আমার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীন।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন অরুণ চন্দ্র মন্ডল বলেন, অদিতির পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। তার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনি এখন আশংকামুক্ত।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নারী সংসদ সদস্য হেপী বড়ালের মেয়ে অদিতি বড়ালের হামলাকারীকে চিহ্নিত করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। কারা কেন এই হামলা চালিয়েছে তা উদঘাটন করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। খুব শিগগির তা বের করতে পারব বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এইচ-এজি//এসআই/বিআই/১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭