স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট শহরের সোনাতলা এলাকায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দিয়ে নগদ অর্থসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করেছে একদল সশস্ত্র ডাকাত।
শনিবার দিনগত গভীর রাতে ওই ঘটনা ঘটে। সে সময় ডাকাতদের বাঁধা দিতে গিয়ে হামলায় আহত হন ওই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারি।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার (২৬ নভেম্বর) সকালে নাইম হাসান ও আকরামুল হাসান নামে দুই নৈশ প্রহরীকে আটক করেছে পুলিশ।
এরআগে গত ১২ নভেম্বর ভোররাতে শহরের খারদ্বার এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মল্লিক আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়িতে ঢুকে একদল সশস্ত্র ডাকাত হামলা চালিয়ে তাকে মারাত্মক জখম করে। ওই ঘটনার ১৫ দিন পার হলেও পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এর কয়েকদিন পর রাতে একই এলাকায় একদল ডাকাত ঢুকেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়লে এলাকার মসজিদের মাইক থেকে গ্রামবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানানো হয়। ওই রাতে খারদ্বার এলাকার বাসিন্দাদের নির্ঘুম রাত কাটে।
জানা গেছে, শনিবার দিনগত রাত আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে সোনাতলা এলাকায় বৃটিশ আমেরিকা ট্যোবাকোর বাগেরহাট জেলা পরিবেশক মেসার্স রফিক এন্টারপ্রাইজে ডাকতির ঘটনা ঘটে। প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম।
ছয় মাস আগেও ওই প্রতিষ্ঠানটিতে একবার ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তখন নগদ টাকাসহ প্রায় ১৬ লাখ টাকার সিগারেট লুটের ঘটনায় একটি মামলা হয়।
রফিক এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘আমি এবং আমার কর্মচারি রাসেল শেষ রাতে এখানেই (প্রতিষ্ঠানে) থাকি। শনিবার রাতে ঘুমানোর পর আনুমানিক আড়াইটা-তিনটার দিকে শব্দে ঘুম ভাঙে। আমরা উঠে মুখোসধারী সশস্ত্র ৬/৭ জনের দেখে ভয় পেয়ে যাই।’
ডাকচিৎকার দিতে গেলে অস্ত্রের মুখে তারা আমাদের দুজনকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে এবং মারধর করে। পরে ক্যাশ বাক্সের ভোল্ট ভেঙ্গে নগদ প্রায় এক লাখ টাকা ও গুদামে থাকা বিভিন্ন ব্রান্ডের প্রায় পাঁচ লাখ টাকার সিগারেট লুট করে চলে যায়।
এরআগে প্রতিষ্ঠানের দুই নৈশ প্রহরীকে অস্ত্রেরমুখে রশি দিয়ে বেঁধে জানালার লোহার গ্রীল ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকে ডাকাত দল।
ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান জানান, চলতি বছরের মে মাসে একই ভাবে একদল সশস্ত্র ডাকাত হানা দেয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সে সময়ে বাগেরহাট মডেল থানায় মামলা হলেও পুলিশ এখনও সেই ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
শনিবার রাতে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে ডাকাতির আগে আশপাশের বেশ কয়েকটি বাড়ির গেটের তালায় সুপারগ্লু জাতিয় তরল আঠা লাগিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান প্রতিবেশিরা। রোববার সকালে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে তার বিষয়টি টের পান।
প্রতিবেশি ঠিকাদার মো. আবুল কালাম আজাদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, রাতে ভয়ে আমরা বাইরে আসিনি। রোববার সকালে তালা খুলতে গিয়ে আমরা বিষয়টি টের পাই। আমার বাড়ি ছাড়াও প্রতিবেশি কৌশিক সেন ও সুভাস দাসের বাড়ির গেটের তালায়ও একই ধরনের আঠা দিয়ে রাখে ওই ডাকাত দল। সকালে আমরা তালা ভেঙ্গে তার পর বের হই।
স্থানীয়রা বলছেন, ডাকাতি করে নির্বিঘ্নে পালানোর জন্য আশেপাশের বাড়ির তালাগুলোয় ডাকাতেরা আঠা দিয়ে রাখে।
ক’দিন আগে ডাকাত আতঙ্ক ছড়ানো শহরের খারদ্বার এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, গেল এক দশকে আমাদের এলাকায় ডাকাতি বা এমন ঘটনা ঘখনও ঘটেনি। আবু বক্কর সিদ্দিকের বাড়িতে ওই ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সাম্প্রতি একটি বাড়ির পেছনের বাগানে রাতে কয়েকজন অজ্ঞাত লোককে দেখে এলাকায় ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে সেই খবর ছড়িয়ে পড়লে মসজিদের মাইক থেকে এলাকার সবাইকে সতর্ক করা হয়। এমন আতঙ্ক কখনও ছিল না।
মডেল থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ দেওয়া দুই নৈশ প্রহরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। তাদের থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ওই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। সংঘবদ্ধ চক্রটিকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।
মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা, চুরি-ডাকাতসহ ধারাবাহিক বিভিন্ন ঘটনা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি কিনা জানতে চাইলে তা অস্বীকার করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা। বলেন, মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছি। হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ তদন্ত করছে।
এজি//এসআই/বিআই/২৬ নভেম্বর, ২০১৭