তিন সেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরি সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেলা জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বাগেরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ নুর মোহাম্মদের উপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আজাদ ফিরোজ টিপু বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির (বার) সভাপতি। তাকে আগমী ১৫ দিনের মধ্যে হামলার ঘটনায় তার জড়িত না থাকার প্রমাণ উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে বলে সভার সূত্রে জানা গেছে।
গত ১৪ অক্টোবর সকালে বাগেরহাট শহরের সোনাতলা এলাকায় নুর মোহাম্মদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা হাতুড়ি দিয়ে পিড়িয়ে জখম করে রাস্তায় ফেলে যায় তাকে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নুর মোহম্মদ। তার একটি পা ভেঙে গেছে।
বারের বহুতল ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলার আইনজীবী নুর মোহাম্মদ। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৩ হাজার টাকায় শুরু হওয়া কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ভাড়াতে লোক দিয়ে ওই হামলা করানো হয়েছে বলে দাবি তার।
ঘটনার পর থেকে হামলার সাথে আওয়ামী লীগ নেতা ও বারের সভাপতি এ্যাডভোকেট এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুসহ সেচ্ছাসেবক লীগের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভাতেও ওই অভিযোগ তোলেন নেতৃবৃন্দ।
** আ.লীগ সহ-সভাপতিকে হাতুড়িপেটা
** আ.লীগ নেতার উপর হামলা: পাঁচ দিনেও মামলা হয়নি
এর প্রেক্ষিতে, এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুকে কারন দর্শানোর নোটিশ এবং সেচ্ছাসেবক লীগের তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগকে চিঠি দেওয়ার সিন্ধান্ত হয় ওই সভায়।
সভায় দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতা অভিযোগ করেন, নুর মোহাম্মদের উপর হামলার কারণ বারের বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজের অনিয়মের বিরোধীতা করা। এজন্য আমাদের দলের নেতা আজাদ ফিরোজ টিপু লোক দিয়ে পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছেন। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া দাবি ওঠে।
শহরের রেলরোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এ্যাডভোকেট শাহী আলম বাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় বক্তব্য দেন সহসভাপতি এ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, আলী আকবর, হেমায়েত ভূইয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান হাবিবুর রহমান, মনোয়ার হোসেন টগর, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাজফুজুর রহমান, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন।
তবে ওই সভায় উপস্থিত থাকলেও কোন বক্তব্য দেননি ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন দাস।
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, নুর মোহম্মদের উপর হামলার প্রতিবাদে জরুরি সভায় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খান হাবিবুর রহমানসহ অনেকেই ওই হামলার জন্য দলের নেতা ও বারের সভাপতি এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। ওই ঘটনায় আমাদের সহযোগী সংগঠন সেচ্ছাসেবক লীগের জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরদার আব্দুল কাদেরসহ রানা ও মনির জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে আজাদ ফিরোজ টিপুকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেওয়ার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সেচ্ছাসেবকলীগের জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সরদার আব্দুল কাদেরসহ রানা, মনিরের বিরুদ্ধে সাংগনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক লীগকে চিঠি দেওয়ার সিন্ধান্ত হয়।
আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে আজাদ ফিরোজ টিপু যে হামলার ঘটনায় জড়িত নন তার পক্ষে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে এবং সেচ্ছাসেবকলীগের ওই নেতাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল তা জানাতে বলা হয়েছে।
ওই সময় পর্যন্ত সেচ্ছাসেবকলীগের সাথে জেলা আওয়ামী লীগের কোন সাংগঠনিক সম্পর্ক থাকবে না বলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে আজাদ ফিরোজ টিপু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিগত দিনে দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে হত্যা, হামলাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পরে তা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হবে।
‘দলের নেতা নুর মোহম্মদের সাথে আমার কোন বিরোধ নেই। আমি তার উপর হামলার ঘটনায় যে জড়িত নই, তা পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হবে।’
এদিকে হামলার ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো থানায় কোন মামলা হয়নি। হামলার ঘটনায় একটি সভা করে নিন্দা বিবৃতি ও দোষিদের শাস্তির দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে জেলা আইনজীবী সমিতি।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আইনজীবী সমিতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নুর মোহম্মদের উপর হামলা হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে পরিস্কার হয়েছে। হামলার শিকার ওই আইনজীবী বর্তমানে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রয়েছেন।
অসুস্থ্য থাকায় আমরা তার কাছ এখনও কোন তথ্য পাইনি। তাছাড়া এখনো মামলাও হয়নি। মামলা হলে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এজি//এসআই/বিআই/২০ অক্টোবর, ২০১৭