অলীপ ঘটক, চিফ নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে গলদা চিংড়ির দাম কেজি প্রতি তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা কমে গেছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।
যুক্তরাজ্যসহ আমদানিকারক দেশগুলোয় ‘অর্থনৈতিক মন্দার কারণে’ সাদা সোনাখ্যাত গলদা চিংড়ির দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে বলে দাবি রপ্তানিকারকদের। ফলে চিংড়ি চাষের জন্য নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
মৎস্য বিভাগ বলছে, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমদানিকারক দেশগুলো গলদা চিংড়ি নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। তাই রপ্তানিমুখী এ পণ্যের দাম স্থানীয় বাজারে পড়ে গেছে।
বাগেরহাটের বারাকপুর, সিঅ্যান্ডবি বাজার ও ফলতিতা মৎস্য আড়ত ঘুরে ও চিংড়িচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরের ভাদ্র ও আশ্বিন মাসের এই সময়ে চাষিরা তাঁদের ঘেরের সব চিংড়ি ধরে বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
চলতি মৌসুমে গলদা চিংড়ির বর্তমান বাজারদর ৫ গ্রেড ৭৫০ টাকা, যা তিন মাস আগে ছিল ১১০০ টাকা; ১০ গ্রেড ৬৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৯৫০ টাকা এবং ১৫ গ্রেড ৫৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫০ টাকা।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ ইউনিয়নের শ্রীঘাট গ্রামের চিংড়িচাষি শেখ লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমার সাড়ে পাঁচ বিঘার মাছের ঘের রয়েছে। রেণু পোনা, মাছের খাবার ও হারির টাকা মিলিয়ে এ বছর খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা। মাছ ধরে বিক্রির মৌসুম শুরু হলেও এখনো ২০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করতে পারিনি। হঠাৎ করে গলদা চিংড়ির বাজার পড়ে যাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি।
তিনি বলেন, ‘লাভ তো দূরের কথা, এ বছর খরচের টাকা ওঠা নিয়েই শঙ্কায় আছি।’
জেলার কচুয়া উপজেলার বিলকুল গ্রামের আবদুল বারেক পাইক ১২ বিঘা জমিতে গলদা চিংড়ির চাষ করেছিলেন।
তিনি বলেন, এ জন্য স্থানীয় এনজিও এবং ব্যাংক থেকেও ঋণ নেন। সব মিলিয়ে খরচ হয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। তিনি বললেন, ‘কিন্তু চিংড়ির ধরার মৌসুম শুরু হলেও দাম পড়ে যাওয়ায় কী করব বুঝতে পারছি না।’
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত। অনেক চাষিই ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ করেন। এ বছর অতিবৃষ্টিতে জেলার প্রায় ১১ হাজার চিংড়িঘের ভেসে যায়। এর কিছুদিন আগে ছিল বাগদা চিংড়ির ঘেরে ভাইরাসের সংক্রমণ।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী গলদা চিংড়ির দাম কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘যুক্তরাজ্যসহ আমদানিকারক দেশগুলোতে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে স্থানীয় বাজারে চিংড়ির দাম পড়ে গেছে বলে আমাদের দেশের রপ্তানিকারকেরা বলছেন। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিংড়ির দাম কমে যাওয়ায় বিষয়টি জানিয়েছি।’
এই চিংড়ির দাম শিগগিরই আবার আগের জায়গায় ফিরবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় বায়ারদের অনীহা, রপ্তানিকারকেরা আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সঙ্গে সমন্বয় করে মাছ কেনে তাই দাম কমে। তা ছাড়া এই সময়ে চাষিরা ঘের প্রস্তুত করতে ঘেরের সব চিংড়ি ধরেন। তাই রপ্তানিকারকেরা মাছের আমদানি (জোগান) বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় তারা সুযোগ নেয়।
বাংলাদেশ হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিকারক সমিতির পরিচালক হুমায়ুন কবির মঙ্গলবার বলেন, ‘বাংলাদেশে ৭০ শতাংশ চিংড়ি রপ্তানি হয় যুক্তরাজ্যে। কিন্তু যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর এর রপ্তানিতে করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশটি আমদানি কমিয়ে দিয়েছে।’
হুয়ায়ুন কবির বলেন, গত বছরও চিংড়ির দাম এমন কম ছিল। এভাবে বছরের পর বছর চলতে থাকলে এ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন কৃষকেরা।
জানতে চাইলে মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, ‘বছর দু-এক ধরেই দাম নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। আমরা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু রপ্তানির বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেখে। আমাদের নতুন রপ্তানির দেশ খোঁজা উচিত।’
এজি//এসআই/বিআই/১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭