স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
চরমপন্থি দলের পরিচয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ৯ চিকিৎসকসহ ২০ কর্মকতা-কর্মচারীর কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
নিষিদ্ধঘোষিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) পরিচয় দিয়ে গত দুই দিনে ওই সংগঠনের পরিচয়ে মুঠোফোনে ৫০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি করা টাকা না পেলে তাঁর ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয় চরমপন্থীরা।
হুমকি পাওয়া চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে সিভিল সার্জন অফিসের এক কর্মকর্তা আতঙ্কিত হয়ে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।
সিভিল সার্জন ও সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক অরুণ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, হুমকি ও চাঁদা দাবির ঘটনায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় বলেন, ফোনে এ ধরনের হুমকি পেয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। যারা এ ধরনের হুমকি দিচ্ছে, তাদের ধরতে র্যাব ও পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে।
একই সঙ্গে হুমকি পেয়ে কাউকে টাকা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কেউ যেন কোনো প্রকার টাকা-পয়সার লেনদেন না করেন। যদি কেউ সমস্যা মনে করেন, তাহলে যেন পুলিশকে অবহিত করেন।
জানা গেছে, ০১৮৫৮-৭২৫৭৯৪ নম্বর থেকে ফোন করে চরমপন্থী সংগঠনের সদস্য হাতকাটা বিপ্লব পরিচয়ে চাঁদা চাওয়া হয়। বাগেরহাট সদর হাসপাতালের ৮ চিকিৎসক ছাড়াও সিভিল সার্জন অফিসের একজন চিকিৎসক ও ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। তাঁদের কাছে ৫ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়।
সূত্র জানায়, ৬ আগস্ট সিভিল সার্জন অফিসের টেলিফোনে একটি ফোন আসে। অফিসের স্টেনোগ্রাফার শেখ নাসির উদ্দিন ফোনটি ধরলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাহবুবুল আলম বীর বিক্রম পরিচয় দিয়ে সিভিল সার্জনকে চাওয়া হয়। তিনি বাইরে আছেন জানালে, প্রথমে সিভিল সার্জন এবং এরপর আরও কয়েক কর্মকর্তার মুঠোফোন নম্বর চান যুগ্ম সচিব পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি।
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কয়েক কর্মকর্তার নম্বর দেওয়ার পর সন্দেহ হলে আমি তাঁকে বলি, আমার কাছে এই মুহূর্তে আর কোনো নম্বর নেই। এতে অপর প্রান্ত থেকে “নম্বর কেন নেই” বলে ধমক দেওয়া হয়। পরে আমার ব্যক্তিগত নম্বর চান তিনি।’
‘পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে মন্ত্রণালয়ে ফোন করে জানতে পারি মো. মাহবুবুল আলম বীর বিক্রম নামে কোনো যুগ্ম সচিব নেই।’ বলেন নাসির উদ্দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বলেন, সর্বহারা পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলা হচ্ছে, তাঁদের সংগঠনের বেশ কয়েকজন অসুস্থ আছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। তা না হলে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বুধবার বাগেরহাট সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) এস এম নজরুল ইসলামের কাছে ফোন করে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল-জনযুদ্ধ) সদস্য পরিচয় দিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। বলা হয়, ‘আমরা তোর বাসার সমনে আছি। বিষয়টি কাউকে জানালে বা এই মুহূর্তে টাকা না দিলে তোর স্ত্রীকে হত্যা করা হবে। ফোনে ঢাকায় থাকা তাঁর একমাত্র ছেলেকেও তুলে নেওয়ার হুমকি দেয় চরমপন্থী পরিচয়দানকারী। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি চারটি নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে ৫০ হাজার দেন।’
এর আগে গত জুলাই মাসে ওই একই চরমপন্থী সংগঠন পরিচয়ে বাগেরহাট বিদ্যুৎ বিভাগ, এলজিইডি, শিক্ষা অফিস, প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া এবং চাঁদা চাওয়া হয়।
এইচ//এসআই/বিআই/১০ আগস্ট, ২০১৭