শরণখোলা থেকে ফিরে, আবু হোসাইন সুমন:
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাথে সারাদেশের সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র উপায় শরণখোলার বগী থেকে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা হয়ে কচুয়া উপজেলার সাইনবোর্ড পর্যন্ত সাড়ে ৫২ কি:মি: আঞ্চলিক মহাসড়কের অবস্থা ভয়াবহ।
গত পাঁচ বছরে কোন প্রকার সংস্কার না করার কারণে এ পথে যাত্রী সাধারণসহ মালামাল পরিবহনে দিন দিন ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রতিদিনই ঘটছে নানা রকম দূর্ঘটনা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শরণখোলা-সাইনবোর্ড সড়কটি ২০১০ সালে আঞ্চলিক মহাসড়কে উন্নীত হয়। সে বছরই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ সাপেক্ষে সেতু ও মাটি ভরাটের কাজ শুরু হয়। সেতু ও মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হলেও সড়ক সংস্কার বা উন্নয়নের কোন কাজ শুরুই হয়নি এখনো পর্যন্ত।
কচুয়ার সাইনবোর্ড থেকে শরণখোলার বগী পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে ৫২ কিঃ মিঃ সড়কের অধিকাংশ রাস্তাই মারাত্মাক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে সাইনবোর্ড থেকে মোড়েলগঞ্জ অংশের ২২ কিলমিটার রাস্তার তুলাতলা, দৈবজ্ঞহাটি, আমতলা, পুলেরহাট মোড়, কলাবাড়িয়া, বলইবুনিয়া, কালিকাবাড়িয়ার অধিকাংশ স্থান খানা-খন্দে ভরা।
এছাড়া মোড়েলগঞ্জ থেকে শরণখোলা অংশের বাকী ৩০ কি:মিটার সড়কের কদমতলা, লাকুড়তলা, রায়েন্দা পাঁচ রাস্তার মোড়, নলবুনিয়া, সিংবাড়ী, আমড়াগাছিয়া, পল্লীমঙ্গল, বাদশার মোড়ের অধিকাংশ স্থানই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জ থেকে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ অন্যন্য স্থানে যাতায়াতের জন্যে সব ধরনের যানবাহনকে দূর্ঘটনার ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। যানবাহনগুলো চলাচলের সময় সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের উপর পড়ে প্রচন্ড ঝাঁকুনি খাচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দূর্ঘটনাও ঘটছে।
শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল হোসেন টিপু বলেন, প্রতিদিন সড়কের কোথাও না কোথাও নতুন নতুন গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও লম্বালম্বি ধ্বসে নিচু হয়ে গেছে। অনেক সময় বাস-ট্রাক দুর্ঘটনা এড়াতে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানের উপর দিয়ে চলাচল না করে সড়কের পাশ দিয়ে চলাচল করায় কোন কোন স্থান ধ্বসে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে মেরামত না করায় বিটুমিন ও পাথরের খোয়া উঠে নুতন নুতন গর্ত তৈরী হচ্ছে। আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে কিছু সংস্কার করলেও সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত পাঁচ বছরে কোন সংস্কারই করেনি।
রায়েন্দার বাস চালক মো: জাকির বলেন, ঝাঁকায় ঝাঁকায় সড়কের মধ্যে গাড়ি বন্ধ হয়ে পড়ে। গাড়ী উল্টে যাওয়া, গাড়ীর যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়া তো নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। রায়েন্দা বাজার কমিটির সেক্রেটারী আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের বাজারের অধিকাংশ পণ্যই খুলনা থেকে সড়ক পথে আনতে হয়। রাস্তা খারাপের জন্যে কোন পরিবহনই পণ্য নিয়ে এই পথে আসতে চায় না। সামনের বর্ষা মৌসুম আসার আগের এই সড়কের সংস্কার না হলে সড়কটি সম্পূর্ন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: কামালউদ্দিন আকন্দ বলেন, সিডরের পর ত্রানকাজ পরিচালনার জন্যে ২০০৮ সালে এই সড়কের কিছু রক্ষনাবেক্ষনের কাজ করা হয়। তারপর সড়ক ও জনপথ বিভাগ আর কোন সংস্কার বা উন্নয়ন কাজ না করায় পুরো সড়কটিই চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে এলাকায় সরকারের ভাবমূর্তি দারুনভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। দ্রুত এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদের ভূমিকা রাখা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাগেরহাট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আব্দুল আলী এ মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, এ সড়কের ২৩ কিলমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্যে আমরা ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে দরপত্র গ্রহণ করেছি। শীঘ্রই কার্যাদেশ দিতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি আরো জানান, আমাদের অর্থ সংকট রয়েছে। বাকী রাস্তা সংস্কারের জন্যে আমাদের আরো ৫০ কোটি টাকার বেশী বরাদ্দ লাগবে। বরাদ্দ পেলে বাকী কাজও আমরা দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার চেষ্টা করবো।