স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করছে জেলা প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকালে থেকে জেলা প্রশাসন এই অভিযান শুরু করে। এতে সহযোগিতা করছে বাগেরহাট পৌরসভা।
শহরের দড়াটানা সেতুর নিচ থেকে বুলডোজার দিয়ে শুরু করা এই উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের ৩ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
ময়লা ফেলে বাগেরহাটের ভৈরব নদ দূষণ ও দখল নিয়ে সাম্প্রতি সংবাদ প্রকাশের পর বাগেরহাট পৌরসভাকে সাথে নিয়ে নদী তীরে ময়লা ফেলা বন্ধে এবং তীরে দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। অভিযানে দড়াটানা সেতু থেকে মুনিগঞ্জ সেতু পর্যন্ত নদের তীর দখল করে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস।
জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অভিযানে সহযোগীতা করছে পৌরসভা।
সরজমিনে দেখা যায়, শহরের নদের তীরের প্রধান বাজার, নাগেরবাজার, সুপারিপট্টি খেয়াঘাট, কেবি মাছ বাজার, লঞ্চঘাট, লোকালবোর্ড ঘাট, পুরাতন বাজার, মুনিগঞ্জ ও হাড়িখালি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁশ খুটি দিয়ে অসংখ্য ঘর তৈরী করা হয়েছে। কোথাও কোথাও নদীর অংশে মাটি ফেলে উচুঁ করে স্থাপনা তৈরী করা হয়েছে। এসব ঘরে বসে তারা ব্যবসা করে আসছেন।
সকাল ১০টার দিকে অবৈধ স্থাপনা ভাঙা শুরুর পর নদের তীরে গড়ে তোলা অনেক স্থাপনা সরিয়ে নেন নিজেরাই।
এরআগে ২০১৪ সালে একবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ভৈরব নদের তীর দখল মুক্ত করেছিল জেলা প্রশাসন। তবে তার কিছু দিন যেতে না যেতেই আবারও দখল হয়ে যায় নদের তীর।
উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়া সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. নাজমুল হুদা বলেন, ভৈরব নদের তীর ও জেগে ওঠা চরে ময়লা আবর্জনা ফেলে কতিপয় ভূমিদস্যু তা দখল করে স্থাপনা গড়ে তোলে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বিকালে প্রথম দিনের মত উচ্ছেদ অভিযান শেষ হলেও বুধবার সকাল থেকে আবারও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দিন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহরের একাধিক বাসিন্দা বলেন, জোয়ার ভাটা বাধাগ্রস্থ হওয়ায় ভৈরব নদ দিন দিন তার জৌলুস হারাচ্ছে। বেশ কিছু জায়গায় চর জেগেছে। এছাড়া বাজারের অনেক বাসিন্দা এখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে স্থাপনা গড়ে তুলেছে। প্রশাসনের ঠিকমত নজরদারি না থাকায় অন্যরাও সে সুযোগ নিয়েছে।
সামনে যাতে আর কেউ এই সুযোগ না নিতে পারে তার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা গেলে দূষণ ও দখল রোধ করা যাবে বলে মত তাদের।
বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, ভৈরব নদ আমাদের ঐতিহ্য। এটা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই নদের যেসব এলাকায় অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে তা ভেঙে দেয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে যাতে আর কেউ নদী দখল করতে না পারে সে জন্য প্রশাসনের নজরদারি রাখার আহ্বান জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ভৈরব তীর দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৌরসভাসহ সবার সহযোগীতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। তীর পুরোপুরি দখল মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরের বাসিন্দাদের নদীতে ময়লা না ফেলতে আহ্বান জানানো হয়েছে। এখন থেকে ভৈরব নদ দূষণমুক্ত করতে এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে রক্ষায় জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা যৌথভাবে মনিটরিং করবে। সবার সহযোগীতা নিয়ে নদটিকে রক্ষায় এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এইচ//এসআই/বিআই/১১ এপ্রিল, ২০১৭
** ময়লার স্তুপে ঢাকা পড়ছে বাগেরহাটের নদ ভৈরব