স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার একটি বিদ্যালয়ে নৈশ প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (২ এপ্রিল) সকালে গাংনী ইউনিয়নের উপজেলার নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোল্লা সিদ্দিকুর রহমানের অভিযোগ, নৈশ প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে কমিটির অন্য সদস্যরা অনাস্থা দেন। তার জেরে সভাপতি তাকে মারধর করেন।
আরও পড়ুন: ওসির হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত
তবে কাজি আমজাদ হোসেনে অভিযোগ প্রধান শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির পাঁচ সদস্যসহ ওই নিয়োগ দিতে ঘুষ নিয়েছেন। তিনি এর প্রতিবার করার প্রধান শিক্ষক তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এদিকে প্রধান শিক্ষকে মারধরের খবরে বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্দ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিচারের দাবিতে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে ব্যবস্থাপনা কমিটি স্কুলে একজন নৈশ প্রহরী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পত্রিকায় একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরপর থেকে কমিটির সভাপতি তার পছন্দের একজনকে নিয়োগ দিতে ব্যবস্থাপনা কমিটি সদস্যসহ আমাকে চাপ দিতে শুরু করেন।
‘সভাপতির ওই অযৌক্তিক দাবি কমিটির অন্য সদস্যরা মেনে না নিয়ে, তার (সভাপতি) বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয়। সভাপতির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থার একটি চিঠিটিও আমার কাছে পৌছে দেয় কমিটির সদস্যরা।’
প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, আমি অনাস্থার চিঠি গ্রহণ করায় ক্ষুব্দ হয়ে রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে আসেন সভাপতি। হটাৎ তিনি আমার কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করেন। এসময় আমার কক্ষে থাকা ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিন, কবির গাজী, রেহানা আক্তার এবং সহকারি শিক্ষক বিশ্বাস মোজাহিদুর রহমান ও হিসাবরক্ষক বিদ্যুৎ কুমার খান মারধর ঠেকাতে গেলে তারও সভাপতির হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। পরে তিনি স্কুল ছেড়ে চলে যান।
শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, স্কুলের সভাপতি বয়সে তরুণ। তিনি মোল্লাহাটের খলিলুর রহমান ডিগ্রি কলেজের পাস কোর্সের ছাত্র। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালি হওয়ায় তাকে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে বসানো হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হরবিলাস কুমার হীরা বলেন, স্যারকে মারধরের খবর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই সভাপতির বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা মিছিল নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে যায়।
মোল্লাহাটের ইউএনও মো. শামীম হাসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, নৈশ প্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। ওই ঘটনায় নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তবে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আমজাদ হোসেন পাল্টা অভিযোগ করেন, প্রায় এক বছর আগে স্থানীয় লোকজন ধরে আমাকে স্কুলের সভাপতি করেন। সম্প্রতি স্কুলে একজন নৈশ প্রহরী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমি যোগ্যতার মাপকাঠিতে নিয়োগ দিতে অনুরোধ করি।
কিন্তু লাচ্চু কাজী নামে স্থানীয় নরসিংহপুর গ্রামের এক ব্যক্তিকে ওই পদে চাকরি দিতে প্রধান শিক্ষক কমিটির অন্য সদস্যদের যোগসাজোসে দুই লাখ টাকা ঘুষ নেন। এর প্রতিবাদ করায় কমিটির পাঁচজন সদস্য আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন বলে শুনে রোববার স্কুলে গেছিলাম।
‘প্রধান শিক্ষকের কাছে অনাস্থার রেজুলেশন দেখতে চাইলে তিনি আমাকে তা দেখতে দেয়নি। উল্টে তারা আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। আমি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দাবি করছি।’
সভাপতির অভিযোগের বিষয়ে জনাতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মোল্লা সিদ্দিকুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নিয়োগে ব্যবস্থা কমিটির সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। এতে আমার কোন হাত নেই।
মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ মো. খায়রুল আনাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, মারধরের ঘটনায় নগরকান্দি সপ্তপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি কাজী আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি আত্মগোপণে যাওয়ায় আমজাদ হোসেনকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
এজি/এসআই/বিআই/০২ এপ্রিল, ২০১৭
** ওসির হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিত