সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
মোরেলগঞ্জ থেকে: পানগুছি নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় আর এক নারীর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ জন।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে প্রায় ৮০ যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ডুবে যায়।
এ ঘটনায় নারী-শিশুসহ এখনও অন্তত ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারে নদীতে অভিযান চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড।
বুধবার (২৯ মার্চ) বেলা সোয়া ১১ টার দিকে উদ্ধার হওয়া নারীর নাম রিমা বেগম (২৩)। নিহতের পিতা মোরেলগঞ্জ উপজেলার পুটিখালী গ্রামের হালিম হাওলাদার মরদেহটি স্বনাক্ত করেছেন।
এ দুর্ঘটনায় এখনও নিখোঁজ থাকা ১৭ জন হলেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার কাছিকাটা গ্রামের মো. আব্দুল মজিদ (৭৫), একই উপজেলার বারইখালী গ্রামের মো. বশিরের স্ত্রী মোসাম্মাৎ লাবনী (২০), আলতিবুরুজবাড়ীয়া গ্রামের প্রয়াত গফ্ফার হাওলাদারের ছেলে মো. সুলতান (৫৫), গোপালপুর গ্রামের তবিবুর রহমান তোতার স্ত্রী মুন্নি বেগম(৪০), কাছিকাটা গ্রামের নাসির শেখের ছেলে মো. নাজমুল (৬), খাউলিয়া গ্রামের কালামের স্ত্রী মোসা. খাদিজা (৪০), বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের আলম চাপরাশির স্ত্রী মোসা. সালমা (৩০), তার ১৮ মাসের শিশু সন্তান মো. সাজ্জাদ, কালিকাবাড়ী গ্রামের আব্দুর সালামের ছেলে মো. আব্দুর রফিক (৩৫), উত্তর সুতালড়ী গ্রামের আ. আজিজের স্ত্রী মোসা. কামরুন্নেছা (৫৮), পুটিখালী গ্রামের হালিম হাওলাদারের মেয়ে রীমা আক্তার (২৬) বুরুজবাড়ীয়া গ্রামের আব্দুল গফ্ফার হাওলাদারের ছেলে মো. আনছার হাওলাদার (৫০)।
শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের মো. বাচ্চু বাদশার ছেলে রাহাত বাদশা (১০ মাস), একই উপজেলার খজুরবাড়ীয়া গ্রামের পুলিশ কনস্টেবল মো. শহিদের স্ত্রী মোসা. নাছিমা (৫৫), রায়েন্দা বাজার এলাকার মো. সামছুল হুদার ছেলে আবির আল শামস্ (১৫), মো. মহসীনের ছেলে মো. হাবিব (৬) ও পার্শবর্তি পিরোজপুর জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের খলিল তালুকদারের স্ত্রী মোসা নাসরিন (২৮)।
নিখোঁজদের খোঁজে নদীর তীরে ভিড় করেছেন স্বজনেরা। উদ্ধারকারী বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি নিজেরাও ট্রলার নিয়ে নদীতে খুঁজে ফিরছেন নিখোঁজ স্বজনদের। দুর্ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ায় নিখোঁজদের জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন স্বজনেরা। এখন অপেক্ষা করছেন লাশের জন্য।
মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাটে বড় ভাইয়ের স্ত্রী ও তাঁর ১৮ মাস বয়সী শিশু সন্তানের খোঁজে এসেছেন উপজেলার ভাসানদল গ্রামের মিজানুর রহমান খোকন। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আমার ভাবি সালমা বেগম (২৭) তাঁর ছেলে সাজ্জাদকে নিয়ে মোরেলগঞ্জ বাজারে যাচ্ছিলেন। ট্রলারডুবির পর থেকে আমরা পরিবারের লোকজন নদী পড়ে তাদের খোঁজাখুঁজি করছি। এখনো তাদের পাইনি। জীবিত উদ্ধারের আর আশা দেখি না। সকাল থেকে আমরা লাশের খোঁজে নদীতে ঘুরছি।’
আরেক নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজন শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা বাজারের বাসিন্দা মো. শাহজাহান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বাগেরহাট থেকে তাঁর ভাবি রোকেয়া বেগম ও ভাতিজা স্থানীয় রায়েন্দা পাইলট হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র আবির আল শামস (১৫) বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রলারডুবির পর ভাবি সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ভাতিজার কোনো খোঁজ নেই। ট্রলার ভাড়া করে তিনি ভাতিজার সন্ধান করছেন বলে জানালেন।
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকরি পরিচালক (ডিএডি) মাসুদুর রহমান সরদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার উত্তরে পানগুছি নদীর শ্রেণীখালি এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় ওই নারীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।
এরআগে, মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থল থেকে মা-মেয়েসহ ওই ট্রলারে থাকা চার নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ডিএডি মাসুদুর রহমান বলেন, নিখোঁদের সন্ধানে বুধবার সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ৪টি দলে ভাগ হয়ে পানগুছি নদীর বদনীভাঙ্গা থেকে ফুলহাতা পর্যন্ত তল্লাসি চালাচ্ছে। এছাড়া নৌবাহিনী দুটি ডুবুরি দল ও কোস্টগার্ড সদস্যরাও উদ্ধার চলিয়ে যাচ্ছেন।
‘জোয়ার-ভাটার নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে দুই পাশের ১০ কিলোমিটার জুড়ে তল্লশি করা হচ্ছে’ বলেন তিনি।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, যারা নিখোঁজ হয়েছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েক জন নারী ও শিশু রয়েছে।
রিমা বেগম নামে এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার সুফিয়া বেগম (৬০), তার মেয়ে বিউটি বেগম (৩৮), নাদেরা বেগম (২০) ও সিয়ার বানুর (৫০) লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
ট্রলার ডুবির ঘটনায় গতকালই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে প্রাথমিক ভাবে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইকে দায়ি করা হচ্ছে।
এদিকে, বুধবার দুপুরে মোরেলগঞ্জ বাজারের কাপুড়ের পট্টি এলাকায় ট্রলার ডুবির ঘটনায় মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। তার পানগুছি নদীতে চলাচলাকারী নৌযানগুলোর খেয়া ঘাট অতিক্রম করার সময় গতি কমিয়ে চালানো এবং নদীর উপর ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।
এইচ/এসআই/বিআই/২৯ মার্চ, ২০১৭
ট্রলারডুবি: মা-মেয়েসহ ৪ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ১৮