স্টাফ করেসপন্ডেন্ট । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পানগুছি নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনায় চার নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন শিশুসহ অন্তত ১৮ জন।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে পানগুছি নদীর পুরতন থানা ঘাটের কাছে অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে ওই ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়দের সাথে নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও পুলিশ। দুপুরে উদ্ধার কাছে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল।
উদ্ধার হওয়া চার নারীর পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এরা হলেন- মোরেলগঞ্জ উপজেলার কালিকাবাড়ি গ্রামের সুফিয়া বেগম (৬০), তার মেয়ে বিউটি বেগম (৩৮), একই উপজেলার ফুলহাতা গ্রামের নাদেরা বেগম (২০) ও গুয়াবাড়িয়া গ্রামের সিয়ার বানু (৫০)।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারটি ৭০ থেকে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে উপজেলার ছোলমবাড়িয়া খেয়াঘাট থেকে পুরাতন থানাঘাটে যাচ্ছিল। এসময় ওই পথে যাওয়া নৌবাহিনীর দ্রুতগতির একটি নৌযানের ঢেউ ও জোয়ারের স্রোতের তোড়ে ট্রলারটি ঘাটে পৌছানোর আগেই ডুবে যায়।
ঘটনার পর স্থানীয়রা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় অন্তত ৩০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে।
ট্রলারটির স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ৪০ থেকে ৫০ জন বলে জানান মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওবায়দুর রহমান।
বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি কন্ট্রলরুম খোলা হয়েছে। যেখানে নারী ও শিশুসহ ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনেরা দাবি করেছেন।
দুপুর তিনটার দিকে মোরেলগঞ্জ ফেরিঘাট থেকে ডুয়ে যাওয়া ট্রলারটি উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনী উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।
ইউএনও আরও বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে ট্রলার ডুবির এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ট্রলার ডুবির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. মোমিনুর রশিদকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পাঁচ সদস্যে ওই কমিটিতে জেলা প্রশাসনের তিন কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের একজন করে কর্মকর্তাকে রাখা হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ট্রলার ডুবির পর আমরা মাইকিং করে স্বজনদের কাছ থেকে নিখোঁজদের তথ্য সংগ্রহ করেছি। এখন পর্যন্ত ১৮ জন নিখোঁজের তালিকা পাওয়া গেছে।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েক জনকে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রেবেকা খানকসহ উদ্ধার হওয়া দু’জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর বিকালে ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেছেন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, জেলা প্রশাসক (ডিসি) তপন কুমার বিশ্বাস, এডিএম মো. মোমিনুর রশিদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন।
ট্রলারডুবিতে নিখোঁজদের উদ্ধারে দমকল বিভাগ, নৌ-বাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান ডিসি।
এইচ/এসআই/বিআই/২৮ মার্চ, ২০১৭/আপডেট