মামলা যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশনে
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলীর বিরুদ্ধে এবার থানায় মামলা করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
অসহায় দুঃস্থ-প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ মেলায় জেলা প্রশাসনের সুপারিশের পর শনিবার (২৬ মার্চ) রাতে বাগেরহাট মডেল থানায় এ মামলা হয়েছে। বাগেরহাট সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল মোকাররম মো. ফজলে এলাহী বাদী হয়ে দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি শেখ শমসের আলী।
মামলাটি দুদক তফসীলভূক্ত হওয়ায় পুলিশ তা নথিভূক্ত করে (রেকর্ড) তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠিয়েছে।
গত ১৯ মার্চ গোটাপাড়া ইউনিয়নে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা বিতরণের সময় সেখান থেকে জোর করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যানের শেখ শমসের আলীর বিরুদ্ধে। বিষয়টি তদন্তে নেমে ইউনিয়নের ১১৯ জন বয়স্ক, ১০৫ জন বিধবা ও ৬২ জন প্রতিবন্ধীর মাঝে ভাতার অর্থ বিতরণের সময় ভাতাভোগীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়ার প্রমাণ পায় প্রশাসন।
দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ভাতার অর্থ থেকে চেয়ারম্যান কর্তিক টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও চিত্রসহ গত ২০ মার্চ সংবাদ প্রকাশ করে বাগেরহাট ইনফো ডটকম। ‘দুস্থ ভাতার টাকায় ভাগ নিলেন চেয়ারম্যান, অত:পর ফেরত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভিডিও চিত্রটি ভাইরাল হয়ে যায়।
সংবাদ প্রকাশের পরদিনই জরুরি সভা করে তিনমাসের ছুটিতে যান গোটাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলামকে।
অন্যদিকে, প্রশাসনের তদন্তে ভাতা বিতরণের সময় ইউপি চেয়ারম্যানের টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ মেলায় তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কি ব্যবস্থা নিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
তবে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলী।
বাগেরহাট মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনায়েত হোসেন মামলার বরাত দিয়ে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শেখ শমসের আলী অসহায় দুস্থ বয়ষ্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের নায্যপ্রাপ্য প্রতারণা করেছেন এবং জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে সরকারের দেয়া বরাদ্দের টাকা বিতরণ না করে তা নিজে আত্মসাত করেছেন। মামলাটি ৪২০ ও ৪০৯ দন্ডবিধিতে হয়েছে, যা দুদকের তফসীলভুক্ত। তাই পুলিশের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই।
‘আমরা মামলাটি নথিভূক্ত করে তা তদন্তের জন্য দুদকের খুলনা জেলা সমন্বিত কার্যালয়ে পাঠিয়েছি।’
সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবুল মোকাররম মো. ফজলে এলাহী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসনের সুপারিশ অনযায়ী গোটাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলীর বিরুদ্ধে ৪২০ ও ৪০৯ দন্ডবিধিতে মামলাটি করা হয়েছে।
এর আগে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তার ইউনিয়নে অসহায় দুস্থ বয়ষ্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কার্ডধারীর নায্যপ্রাপ্য থেকে টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ ওঠায় সমাজসেবা তদন্ত করে। প্রাথমিক তদন্তে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে।
তিনি জানান, তদন্তকালে আমরা চারজন গ্রাম পুলিশের সদস্য ও দশজন কার্ডধারী ভাতাভোগীর লিখিত জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। এছাড়া আরও ১৭জন ভাতাভোগীও স্বাক্ষ্য দিয়েছে। মামলায় আমরা ওই বিষয়টি উল্লেখ করেছি।
২০১৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী শেখ সমশের আলী গোটাপাড়া ইউনিয়ন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে এলাকার রাস্তা থেকে ইট তুলে বিক্রি করে দেওয়া, সালিশ বৈঠকের নামে অনৈতিক অর্থ গ্রহণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
এইচ/এসআই/বিআই/২৬ মার্চ, ২০১৭
** শমসের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে প্রশাসন
** দুস্থ ভাতার টাকায় ভাগ নিলেন চেয়ারম্যান, অত:পর..