নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ সমশের আলী বিরুদ্ধে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতার টাকা বিতরণে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করেছে জেলা প্রশাসন।
গত ১৯ মার্চ গোটাপাড়া ইউনিয়নের বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা দুস্থ মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা টাকা বিতরণ করা হয়। অগ্রণী ব্যাংকের গোটাপাড়া শাখার কর্মকর্তারা ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে ওই টাকা বিতরণ করেন।
ওই দিন ভাতা ভোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। বিষয়টির তদন্তে নেমে অভিযোগের সত্যতা পায় প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান শেখ সমশের আলী বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কেও চিঠি দেয়া হয়েছে।
এদিকে, ওই চেয়ারম্যান তিন মাসের ছুটিতে গেছেন বলে বৃহস্পতিবার একটি আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাগেরহাট সদরের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
২০১৬ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থীত প্রার্থী শেখ সমশের আলী গোটাপাড়া ইউনিয়ন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তিনি ছুটিতে যাওয়ার পর গোটাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান শেখ শহিদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দুস্থ ভাতার টাকায় ভাগ নিলেন চেয়ারম্যান, অত:পর..
অনিয়োমের প্রমান মেলায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) মো. শফিকুল ইসলাম উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে বলেছেন। বুধবার (২২ মার্চ) এ সংক্রান্ত একটি দাপ্তরিক পত্রে স্বাক্ষর করেন ডিডিএলজি। চিঠিতে মামলা দায়েরের প্রয়োজনিয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ পূর্বক ওই কার্যালয়কে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গোটাপাড়া ইউনয়নের বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী মিলিয়ে ৯৭৭ জন ভাতা পান। রোববার তাদের মাঝে ভাতার টাকা বিতরণ করা হচ্ছিল। সেই টাকা থেকে চেয়ারম্যান কর্তিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা জোরপূর্বক নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
জেলা প্রশাসকের নির্দশে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাৎক্ষণিক ভাবে ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় উপজেলা সামাজসেবা কর্মকর্তাকে নিয়ে সরেজমিনে তদন্তে যান। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ইউএনও ২০ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার তদন্তে ১৯ মার্চ ইউপি কার্যালয়ে গেলে স্থানীয়রা জানায়, সরকারি গাড়ি দেখে চেয়রম্যান পরিষদ থেকে পালিয়ে গেছে। তদন্তকালে চার জন গ্রামপুলিশ এবং ১০ জন ভাতাভোগীর মৌখিক ও লিখিত জবানবন্দী গ্রহণ করা হয়। এছাড়া আরও ১৭ জন ভাতাভোগী চেয়ারম্যান কর্তিক ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন।
গ্রামপুলিশগণ তাদের বক্তব্যে চেয়রম্যানের নির্দেশে টাকা গ্রহণের কথা জনিয়েছেন। এছাড়া তদন্ত দল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত চেয়ারম্যান কর্তিক টাকা গ্রহণের একটি ভিডিও ক্লিপ প্রতিবেদনের সঙ্গে জমা দেয়।
ওই প্রতিবেদন পেয়ে গোটাপাড়া ইউপি চেয়াম্যান শেখ সমশের আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রয়োজনিয় নিতে বলা হয়েছে।
টাকা নেওয়ার ঘটনার সংশ্লিষ্টটার প্রমান পাওয়ায় গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সদরের ইউএনও এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে অগ্রণী ব্যাংক বাগেরহাটের অতিরিক্ত মহা ব্যবস্থাপককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বাগেরহাটে অগ্রণী ব্যাংকের আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত মহা ব্যবস্থাপক মানষ কুমার পাল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, টাকা বিতরণে ব্যাংকের জড়িত থাকার অভিযোগ আসার পর আমারা ঘটনাস্থাল পরিদর্শন করেছি। ভাতাভোগীদের কাছ থেকে যে ৫০ টাকা নেওয়ার অভিযোগ এসেছে ওই টাকা আসলে গ্রাহকদের ব্যাংক হিসাবে জামা আছে।
‘আমরা তদন্তে ব্যাংকের অনিয়োমের কোন প্রমান পাইনি। বাইরে কি হয়েছে সে বিষয়ে আমাদের জানা নেই।’
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের মাধ্যমে ভাতা বিতরণের প্রজ্ঞাপন আসার পর ভাতাভোগীদের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদে বুথ করে টাকা দেওয়ার সুযোগ থাকায় সেদিন ব্যাংক টাকা বিতরণ করতে পরিষদে যাওয়া হয়। তবে এই ঘটনার পর ব্যাংকের বাইরে টাকা বিতরণ না করতে শাখাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়ে বাগেরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মঞ্জুরুল আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমরা এখনও চিঠিটি হাতে পাইনি। চিঠি পেলেই সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুদা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, জেলা প্রশাসনের চিঠি হাতে পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়ে ইউএনও জানান, বৃহস্পতিবার গোটাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শেখ সমশের আলীর তিন মাসের ছুটিতে যাবার আবেদন পেয়েছেন। ছুটির আবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন যেহেতু পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তাই সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে তিন মাসের ছুটি নিচ্ছে। ওই আবেদনের সঙ্গে ছুটির বিষয়ে ইউপি সভায় আলোচনার সিদ্ধান্তের রেজুলেশনের একটি কপিও সংযুক্ত দেওয়া হয়েছে। যাতে সংবাদ প্রকাশের পর ২১ মার্চ জরুরি সভা করে ওই দিন থেকে তিন মাসের ছুটিতে যাবার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান শেখ সমশের আলীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, অভিযোগ পেয়েই জেলা প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে বুধবার একটি দাপ্তরিক চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সদরের ইউএনও, উপজেলা সমাজ সেবা ও ব্যাংকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এইচ/এসআই/বিআই/২৩ মার্চ, ২০১৭
** দুস্থ ভাতার টাকায় ভাগ নিলেন চেয়ারম্যান, অত:পর..