স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
চকলেট দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বাগেরহাটে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিদ্যালয় সংলগ্ন এক বাড়ির ষাটউর্ধ্ব বৃদ্ধ।
বুধবার (১৫ মার্চ) বাগেরহাট সদর উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকারে এ ঘটনা ঘটে।
সে সময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি ওই দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে। সেই ছবি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়। বিষয়টি গড়ায় ভ্রাম্যমাণ আদাালত পর্যন্ত।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ষাটউর্ধ্ব ওই ব্যক্তিকে আটক করে। পরে তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
দন্ডপ্রাপ্ত রোকন হালদার ওরফে রোকা (৬০) বাগেরহাট সদর উপজেলার দেপাড়া গ্রামের মবিন হালদারের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, বুধবার (১৫ মার্চ) বাগেরহাট সদর উপজেলার ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা এবং পুরস্কার বিতারণী অনুষ্ঠান চলছিল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিবাকরা ওই অনুষ্ঠান নিয়ে বস্ত ছিলো। সে সময় বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরে এক যুবকের মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ছবিতে দেখা যায় স্কুলের পাশের পরিত্যাক্ত একটি ঘরে শিশুটিকে আটক রেখে জোরপূর্বক শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে রোকন হালদার।
বিষয়টি জানাজানি হলে তা ধামাচাপা দিতে নানা ভাবে চেষ্টা চালায় রোকন ও তার লোকজন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নাজিম উদ্দিন জানান, দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে আটক রেখে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা হয়েছে, এমন অভিযোগ পেয়ে পুলিশ নিয়ে তিনি দুপুরে অভিযানে নামেন। বিষয়টি টের পেয়ে রোকন হালদার বাজার থেকে দৌড়ে পালিয়ে যায়।
প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে ছদ্মবেশ নিয়ে অভিযানের পরে পাশ্ববর্তী বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে তাঁকে আটক করা হয়।
এর আগে, মোবাইফোনে ধারণকৃত ওই ঘটনার আপত্তিকর একটি ছবি হাতে আসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের।
নাজিম উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে রোকন হালদার ওই স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। আদালতকে তিনি জানিয়েছেন, চকলেট খাওয়ার লোভ দেখিয়ে সে ওই শিশু শিক্ষার্থীকে স্কুল মাঠ থেকে ডেকে পাশ্ববর্তী পরিত্যাক্ত একটি ঘরে নিয়ে যান।
আদালতের কাছে দাবি আরও বলেন, বিষটি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার জন্য গোটাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারমান শেখ শমসের আলীকে ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা, জোর পূর্বক আক্রমণ ও বলপ্রয়োগের অপরাধে রোকন হালদার নামে ওই ব্যক্তিকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
তবে এবিষয়ে জানতে গোটাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শমসের আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই লম্পটের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এমন কোন বিষয় জানিও না, আমি সেখানে যাইও নি।’
পর্ণোগ্রাফী বিক্রির দায়ে দু’জনের জেল
একই আদালত দুপুরে জেলার কচুয়া উপজেলার কচুয়া বাজারে পর্ণোগ্রাফী মজুদ ও বিক্রির দায়ে দুই ব্যক্তিকে এক মাস করে কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কচুয়া উপজেলা সদরের আব্দুল খালেক শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম শেখ (৩০) ও উপজেলার গোপালপুর গ্রামের নির্মল হালদারের ছেলে মৃনাল হালদার (৪৩)।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন বলেন, জেলা প্রশাসনের নিয়োমিত অভিযানে কচুয়া বাজারের ভাই ভাই মোবাইল সেন্টার ও গ্লাস প্যালেস নামে দুটি দোকান থেকে বিপুল পরিমানের পর্ণো ছবি ও ভিডিওসহ দুটি কম্পিউটার জব্দ করা হয়।
পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পর্ণোগ্রাফী মজুদ ও বিক্রির দায়ে ওই দুই দোকানীকে এক মাস করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিপিসি/এইচ/এসআই/বিআই/১৬ মার্চ, ২০১৭