স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
দুর্ঘটনার মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া বাস চালকের নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে ডাকা অনিদৃষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনেও কোন প্রকার যানবাহন না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছে যাত্রীরা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির ডাকে রোববার ভোর থেকে ১০ জেলায় শুরু হয় এ ধর্মঘট। তবে নতুন করে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় যান চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘট শুরু করেছে শ্রমিকরা।
এতে প্রথম দিনের চেয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আরও কঠোরতার সঙ্গে চলছে ধর্মঘট। ফলে সোমবার বাগেরহাট থেকে বাস, মাইক্রোবাসসহ কোন প্রকার দূরপল্লার যানবাহন চলাচল করছেনা।
রোববারও সিমিত আকারে কিছু মাইক্রোবাস চলাচলা করলেও সোমবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বাগেরহাট থেকে কোন মাইক্রোবাসও ছাড়ে নি।
সকালে বাগেরহাট বাস স্টান্ডে আসা রাসেল শেখ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম, দ্বিতীয় দিনে ধর্মঘট কিছুটা শিথিল হবে। কিন্তু আজ তো কিছুই চলছে না। বাগেরহাট থেকে মাওয়া পর্যন্ত যে মাইক্রোবাস চলে, তাও চলছে না। হরতাল-অবরোধের সময়ও কিছু গাড়ি চলে, বিআরটিসির বাস চলে। কিন্তু এখন কিছুই চলছে না। আমরা জিম্মি হয়ে আছি।’
একই ভাবে নিজের অসহায়ত্বের কথা জানাচ্ছিলেন বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা অন্য যাত্রীরা। অনেকেই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাদের অভিযোগ, ধর্মঘট পালনকারী শ্রমিকেরা অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। বিশেষ করে চার চাকার কিছু চলতে দিচ্ছে না।
রাসেলের মতোই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কচুয়ার সাইনবোর্ড এলাকার ইরফান আহম্মেদ। বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বললেন, ‘এখানে যারা আছে, সবারই জরুরি কাজ। আমি ঢাকায় থাকি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আমরা কেউই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি না। গাড়ি ইচ্ছা করলে যেতে পারে, কিন্তু যাচ্ছে না। যেতে দিচ্ছে না। কিছু চক্রের কারণে আমরা এখানে জিম্মি হয়ে আছি। তার ওপর যেতে চাইলেও ৫০০ টাকার ভাড়া চাইছে দেড় হাজার, দুই হাজার টাকা। ফলে আমরা এখন এখানে জিম্মি অবস্থায় পড়ে আছি।’
ধর্মঘটে বাস না চললেও মুলতো মাইক্রোবাসে করে মাওয়া, মাওয়া থেকে ঢাকা যাবার ভাবনা নিয়ে ভোর থেকে তাদের মতো অনেকেই এসেছিলেন বাগেরহাট স্টান্ডে। কিন্তু গাড়ি চলতে না দেওয়ায় তাদের সবার কন্ঠেই ছিলো ক্ষোভ।
বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা কোড়ামারা গ্রামের বাসিন্দা মেরি বেগম (৪২) বলেন, ‘মোটরসাইকেলে করে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসস্ট্যান্ডে আসছি। ভেবেছিলাম, ভোরে হয়তো কিছু চলবে। আমার নাতিডা খুব অসুস্থ। এহন (এখন) ঢাকা যাব কী করে, বাপ।’
মাইক্রোবাসের চালক মো. খোকন মোল্লা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘বাগেরহাট স্ট্যান্ড, কাটাখালী ও রূপসা থেকে প্রতিদিনই মাওয়া পর্যন্ত আমাদের মাইক্রোবাস চলে। কিন্তু গতকাল পথে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙছে। তাই আজ আমরা মাইক্রোবাস চালাচ্ছি না।’
খোকন মোল্লা আরও জানান, মাওয়া রোডে গতকাল রোববার গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া, পুলিশ লাইন, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভেঙেছেন বাস শ্রমিকেরা। খোকন শেখ নামের এক চালককেও মারধর করা হয়েছে।
ওই মাইক্রোবাস চালকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা বলার সময় আরেক মাইক্রোবাসের চালক এসে অবশ্য বলতে থাকেন, ‘আমরা শ্রমিক, আমাদের সংগঠন আছে। আমাদের বিনা কারণে সাজা দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা গাড়ি বন্ধ রাখছি। নিজেরাই গাড়ি চালাচ্ছি না।’
ঢাকার বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরিজীবী আরাফ হোসেন লিপু বলেন, ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসও চলতে দিচ্ছেন না পরিবহন শ্রমিকেরা।
বাগেরহাট থেকে লঞ্চ, ট্রেনের মতো বিপল্প কোন যাতায়েত ব্যবস্থা নেই। তাই জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে যাওয়া দূরহ হয়ে পড়েছে, যোগ করেন লিপু।
বাগেরহাট আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আবু বক্করের ভাষ্য, ‘শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়ে বাগেরহাটের ১৬টি রুটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছি। শ্রমিকদের স্বার্থে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না। মালিক-শ্রমিকেরা সবাই নিজেদের থেকেই গাড়ি বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছে।’
২০১১ সালে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাসচালক জামির হোসেনের মুক্তির দাবিতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন আজ।
এইচ/এসআই/বিআই/২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭