স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের কৃত্রিম পুকুর (প্যান) থেকে আরও ১৪টি কুমির ছানার মরদেহ ও দু’টির দেহাবশেষ পাওয়ার খবর দিয়েছে বন বিভাগ। হদিস মিলছে না আরও একটি কুমির ছানার।
রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে দু’দফায় আর ৪৩টি কুমির ছানা হত্যা ও নিখোঁজ হয়। রোববার আরও ১৭টি মিলিয়ে এক সম্পাহের মাঝে ৬০টি কুমির ছানা হত্যা ও গায়েব হয়েছে।
ডিএফও বলেন, রোববার সকালে আমাদের নজরে আসে করমজল কেন্দ্রে কুমিরের বাচ্চার প্যানে কয়েকটি বাচ্চা মারা গেছে। পরে সেখান থেকে কুমিরের ১৪টি মৃত বাচ্চা ও ২টি বাচ্চার লেজ উদ্ধার করা হয়। মৃত কুমিরের বাচ্চাগুলের ঘাড়ের উপর কামড়ের চিহ্ন রয়েছে। যা থেকে মনে হচ্ছে কোন বন্যপ্রাণী এগুলেকে হত্যা করেছে।
এছাড়া আরও একটি কুমিরের বাচ্চা কোন বন্যপ্রাণী সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলেছে বলে জানান তিনি।
সাইদুল ইসলাম জানান, গননা করে দেখা গেছে ১৪টি মৃতদেহ ও দুটি লেজসহ মোট ১৬টি কুমিরের বাচ্চা ছাড়াও একটি বাচ্চা কম আছে। মনে হচ্ছে বনবিড়াল বা এধরণের কোন বন্যপ্রাণী একটি বাচ্চাকে সম্পূর্ণ খেয়ে ফেলেছে।
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি করমজল কেন্দ্রের দুটি প্যান থেকে ৩৬টি কুমিরের বাচ্চা খোয়া যায়। পর দিন ৩০ জানুয়ারি নিখোঁজ হয় প্যানে থাকা কুমিরের আরও ৭টি বাচ্চা। যেগুলোর মধ্যে ৬টি বাচ্চার মৃতদেহ এবং একটি লেজ ও একটি মাথা পাওয়া যায়। তবে এর আগে নিখোঁজ ৩৬টি কুমির ছানার আর কোন হদিস পাওয়া যায় নি।
প্রথমে দুই দফায় কুমির ছানাগুলো নিখোঁজের পর শিয়াল বা বন বিড়াল এগুলোকে নিয়ে গেছে বলে প্রচার করলেও বন বিভাগ পরে দাবি করে কেন্দ্রর দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের জেরে এগুলোকে বাচ্চা গুলোকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় বন বিভাগ কেন্দ্রর বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এছাড়া চাকরিচ্যুত করা হয় চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী জাকির হোসেনকে। এ ঘটনায় জাকিরসহ অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে করমজল প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি ও হত্যার অভিযোগে খুলনার দাকোপ থানায় একটি মামলা দায়ের করে বন বিভাগ।
৪৩টি বাচ্চা নিখোঁজ হবার পর গত বৃহস্পতিবার সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলো বন বিভাগ। রোববার ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকেলেও তা পিছিয়েছে।
ডিএফও সাইদুল ইসলাম বলেন, রোববার আরও ৩টি কুমিরের বাচ্চা খেয়ে ফেলাসহ ১৭টি বাচ্চা মৃত্যুর পর কমিটি আরও এক সপ্তাহ সময় চেয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য কমিটিকে আরও এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।
প্রথম দফায় কুমির ছানাগুলো নিখোঁজর পর বনবিভাগ বলে আসছিলো এগুলোকে কোন বন্যপ্রাণী নিয়ে গেছে বা হত্যা করেছে বা খেয়ে ফেলেছে এমন কোন আলামত সেখানে পাওয়া যায় নি। তবে তৃতীয় দফায় বাচ্চাগুলোকে বন বিড়াল খেয়ে ফেলেছে বলে দাবি করে বন বিভাগ।
ডিএফও জানান, কুমিরের বাচ্চাগুলো যে প্যানে ছিলো তার উপরের একটি অংশ থেকে কোন বন্যপ্রাণী প্রবেশ করেছে এমন ছিদ্র আছে। আর মৃত বাচ্চাগুলোর ঘাড়ের উপর কামড়ের দুটি দাগ ছিলো এবং প্যানের মধ্যে রক্ত দেখা গেছে।
করমজলে থেকে ফোনে ডিএফও আর বলেন, কুমিরের বাচ্চাগুলোকে কিসে হত্যা করলো তা জানার জন্য মৃহদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া রোববার উপজেলা পাণীসম্পদ কর্মকর্তা করমজল এসে কুমিরের বাচ্চার ঘারে থাকা কামড়ের চিহ্ন দেখে বনবিড়ালের কামড় হয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেছেন।
এদিকে, এক সম্পাহের মাঝে ৬০টি কুমির ছানা হত্যা ও হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় করমজলের কুমির প্রজনন কেন্দ্রে নজরদারি বাড়িয়েছে বন বিভাগ। নিরাপত্তার জন্য দূরের অন্য প্যানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জীবিত কুমির ছানাগুলোকে।
এছাড়া ওই প্যান এলাকার আশপাশ ও প্যানের ভেতরে রাতে ক্যামেরা সবানো হয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।
বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির নোনা পানির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে ২০০২ সালে করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি এই কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সবশেষ ২৭৭টি কুমির থাকলেও তিন দফায় ৬০টি কুমির হত্যা ও নিখোঁজের পর বর্তমানে প্রজনন কেন্দ্রে তিনটি বড় কুমিরসহ মোট ২১৭টি কুমির রয়েছে।
এদিকে, করমজলে দেশের একমাত্র সরকারি কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে একের পর এক কুমির নিখোঁজ ও হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পাচারের কোন ঘটনাকে আড়াল করতে নতুন করে আবার কুমিরের বাচ্চা হত্যা করা হচ্চে বলেও অভিযোগ উঠছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এইচ/এসআই/বিআই/০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
** পাচার নয়, কুমির ছানাগুলোকে হত্যা করা হয়েছে: বন বিভাগ
** সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রর ৪৩টি কুমির ছানা উধাও