সরদার ইনজামামুল হক | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট থেকে খুলনা। যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়ক পথটি একদম খারাপ না। অবশ্য সড়কের নওয়াপাড়া থেকে কাটাখালি পর্যন্ত অসংখ্য গর্ত আর খানাখন্দের কারনে বর্তমানে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
তবে এই রুটে যাতায়াতকারীদের বড় ভোগান্তির নাম বাগেরহাট-খুলনা রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন বাস সার্ভিস।
সরাসরি বাস সার্ভিস বলে কেবল পথে পথে যাত্রী তোলাই নয়, ‘খুলনা টু বাগেরহাট’ রুটের বাসগুলোতে নির্ধারিত সিটের চেয়ে অন্তত ২০ থেকে ৩০ জন করে যাত্রী বেশি তোলা হয়। আছে বাস স্টাফদের বাজে ব্যবহার।
সম্প্রতি বাগেরহাট থেকে খুলনা যেতে এই রুটের বাসে চড়া। বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে থেকে বাসের হেলপারের ডাইরেক্ট সোনাগাঙ্গা (খুলনা) ডাকে বাসে ওঠা। ৪১ সিটের গাড়িতে তখন ৬০ জনের বেশি যাত্রী।
বাসের সিট আর ইঞ্জিন কাভার ছাড়াও বসার জন্য অতিরিক্ত টুল ও সিট লাগানো হয়েছে। এর ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন তো আছেই। ৪১ সিটের বাসে দ্বিগুণ যাত্রী তোলাই যেন নিয়ম।
বাসের গেট পর্যন্ত যাত্রী দাঁড়ানো, তারপরও লোক তুলে ঠেলে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে পেছনে। ডিসি অফিসের সামনে থেকে বাসটিতে ওঠেন আরও চার-পাঁচজন। অন্য যানবাহন না থাকায় সবাই বাধ্য হয়েই উঠছিলেন এই বাসে।
ডিসি অফিস রেখে দশানী, মাজার মোড় থেকে আবারও যাত্রী তোলে বাসটি।
এরই মধ্যে দাঁড়ানো-বসা সব যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া তুলতে শুরু করেন সুপারভাইজার। যারা কোনো রকমে বসতে পেরেছেন তাদের ভাড়া ৬০ টাকা, আর দাঁড়ানো যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হলো ৫০ টাকা।
বাসের সুপারভাইজার সোহাগ বলেন, ৪১ সিটের গাড়ি হলেও এখানে ট্যুল আর ইঞ্জিন কাভার মিলে ৫০ জনকে বসাতে পারি। আর দাঁড়ানো যাত্রী মিলিয়ে কমপক্ষে ৭০ জন যাত্রী নিতে পারি।
অধিকাংশ সময় ৭০ বা তারও বেশি যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করছে বলে জানান তিনি।
চলতে চলতে কাটাখালি মোড়ে এসে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে বাসটি। বাসে ভালোভাবে দাঁড়ানোর জায়গা না থাকলেও নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ আরো অন্তত ১৩ জন যাত্রী তোলা হয় বাসে।
এর প্রতিবাদ করায় এসময় এক যাত্রীকে বাস থেকে নেমে যেতে বলেন চালক। চালক বলেন, সারা বাংলাদেশে কোথাও ডাইরেক (সরাসরি) বাস নেই। আছে টাইমের গাড়ি। আপনারে টাইম মতো পৌঁছায়ে দিলি হলো।
ততক্ষণে খুলনা-বাগেরহাট রুটের ৪১ সিটের সরাসরি বাসটিতে যাত্রী প্রায় ৮০ জন।
বাসযাত্রী সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন বলেন, আমি ৩০ বছর খুলনায় চাকরি করেছি। এই রুটের বাসের এই অবস্থা বরাবরই। সিটগুলো এতোই চাপা যে ঠিকমতো পা রেখে বসা যায় না। সামনের সিটের সঙ্গে হাঁটু আটকে যায়। তার ওপর এমনভাবে লোক তোলা হয় যেন গুদামে বস্তা গাদানো হয়েছে।
বাসে থাকা বাগেরহাটের এক ব্যবসায়ী রতন নন্দীর প্রশ্নে সুপারভাইজারের দাবি ‘ডায়রেক গাড়ি হলেও আমরা এভাবেই যাই। এটাই নিয়ম।
সড়কে গণপরিবহনের এমন জিম্মি দশা থেকে মুক্তি চান সাধারণ যাত্রীরা। প্রয়োজনে সরকারি বাস সার্ভিস চালুরও দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোমিনুর রশীদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এবং বাস মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। চলিত সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এইচ/এসআই/বিআই/০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭