স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাটে কুকুরের কামড়ে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক পথচারি আহত হয়েছেন।আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলেও জলাতংকের ভ্যাকসিন না থাকায় দুর্ভোগে পড়ছেন তারা।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কুকুরের কামড়ে আহত অন্তত ৪৭ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে।
স্থানীয়রা জানায়, একটি বেওয়ারিশ পাগল কুকুর বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ, সুন্দরঘোনা, চাঁপাতলা, সায়েড়া, সদুল্লাহপুর ও মগরা গ্রামের পথচারিকে কামড়ে রক্তাক্ত জখম করে। আহতদের বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আক্রমণকারী কুকুরটিকে সন্ধ্যার দিকে পানিতে চুবিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আক্রান্ত এক ব্যক্তি।
এদিকে, কুকুরের আক্রমণে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে আনা হলেও সেখানে জলাতঙ্কের টিকা (ভ্যাকসিন) না থাকায় রোগীদের বাইরে থেকে চড়া দামে ভ্যাকসিন কিনতে হচ্ছে। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনেরা।
পথচারি জব্বার শেখ সন্ধ্যায় বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটি কুকুর হঠাৎ আমাদের উপর হামলে পড়ে। কুকুরটি তার সামনে যাকে পাচ্ছে তাকেই কামড়ে রক্তাক্ত করছে।
কুকুরের কামড়ের শিকার বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি শিশু শিক্ষার্থী নাঈমা ইয়াসমিন জানায়, সে স্কুল থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিল। এসময় পিছন থেকে একটি কুকুর দৌড়ে এসে তার শরীরে কামড় শুরু করে। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।
কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সোয়েব হাওলাদার অভিযোগ করেন, হাসপাতালে কুকুরে কামড়ানোর ভ্যাকসিনে নেই। এখানকার চিকিৎসকরা ভ্যাকসিন বাইরের র্ফামেসী থেকে কিনে আনতে বলেছেন। কিন্তু ভ্যাকসিনের দাম অনেক বেশি হওয়ায় আমরা কিনতে পারছিনা।
নমিতা রানী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। টাকা-পয়সা নেই বলেই সরকারি হাসপাতালে আইছি। কিন্তু এরা বলছে বাইলে থেকে ১২শ’ টাকা দিয়ে টিকা (ভ্যাকসিন) কিনে আনতে। এতো টাকা কোথায় পাবো? আমরা কি ওষুধ, চিকিৎসা না পেয়ে মরতে হবে।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক মুশফেকার শামস্ মেনন বলেন, বেলা বারোটা থেকে বিকাল ছয়টা পর্যন্ত অন্তত ৪৭ জন কুকুরে কামড়ানো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কুকুরের কামড়ে আহতদের আতঙ্কিত না হয়ে সকলকে ক্ষতস্থানে বেশি করে পানি ও ‘বল সাবান’ দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সবাইকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও সিভিল সার্জন ডা. অরুণ কুমার মন্ডল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, হাসপাতালে গত এক মাস ধরে ভ্যাকসিন শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।
তাই চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাইরে থেকে ভ্যাকসিন কিনতে বলা হচ্ছে।
হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নেয়া – নাঈমা ইয়াসমিন (১০), মারিয়া (৮), তানভির (৯), আলিফ (৮), জব্বার শেখ, ইসমাঈল শেখ, সাহেব আলী, সোয়েব হাওলাদার, হালিমা বেগম, ইসরাফিল শেখ, শেখ শাহেদ, ইসলাম শেখ, রহমান শেখ, নাইম শেখ, মোতাহার শেখ ও জামাল হাওয়াদারের নাম পাওয়া গেছে। তাদের সবার বাড়ি সুন্দরঘোনা, সদুল্লাহপুর, সায়েড়া ও মগরা গ্রামে।
জামাল হাওলাদার নামে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক ব্যক্তি জানান, বিকালে বারাকপুর থেকে হেঁটে আসার সময় কুকুরটি পিছন থেকে লাফিয়ে উঠে আমার ডান কামড়ে ধরে। আমি এসময় অন্য হাত দিয়ে কুকুরটির গলা ধরে পাশের লেকে ঝাঁপ দেই। পরে পানিতে চুবিয়ে কুকুরটিকে মেরে ফেলেছি।
এজি/এসআই/বিআই/২৫ জানুয়ারি, ২০১৭