সুমন বিশ্বাস, বাগেরহাট:
গত শুক্রবার বাগেরহাটের স্বাধীনতা উদ্যানে জেলা পর্যায়ের ‘৩৪ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা-২০১৩’ এর শেষ দিন উদযাপিত হল।
দিনের শুরুতে সকাল ১০ টায় রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে ১ মিনিট দাড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। পরবর্তিতে “ডিজিটাল নাগরিক সেবা ও বর্তমান বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট” শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খান মোঃ রেজাউন নবীর সভাপতিত্বে কী নোট উপস্থাপন করেন বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুল হক খান। তার অনুমতিতে মূল পেপার উপস্থাপন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুজ্জামান খান। নির্ধারিত আলোচক ছিলেন বরেণ্য শিক্ষাবিদ খান মোজাফফর হোসেন।
তিনি তার আলোচনায় বলেন “ভাড়া করা প্রযুক্তি দিয়ে উন্নয়ন হবে না। বরং নিজেদেরই বিজ্ঞানী হয়ে প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে হবে”। পরে শিক্ষাবিদ চৌধুরী আব্দুর রব বলেন “প্রাচীন ধ্যান ধারনায় তাবিজ পরা বর্তমান এ ডিজিটাল যুগে বেমানান”। তিনি ‘ডিজিটাল’ শব্দের ব্যাখ্যাও দিয়ে যান।
বিকাল ৩ টায় ফাইনাল বিতর্কের দ্বারা দিনের ২য় অংশের অনুষ্ঠান শুরু হয়। জুনিয়র গ্রুপের বিতর্কের ফাইনালে অংশ নেয় বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগেরহাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সিনিয়র গ্রুপে প্রতিযোগিতা করে প্রফুল্ল চন্দ্র (পিসি) বিজ্ঞান ক্লাব ও সরকারী পিসি কলেজ।
এরপর শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। বাগেরহাট জেলা প্রশাসক জনাব শুকুর আলী খানের সভাপতিত্বে এ সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ। পরিশেষে শুরু হয় পুরষ্কার বিতরনী পর্ব।
শেষ্ঠ স্টলের পুরষ্কার জিতে নেয় বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এর স্টল এবং কুইজ পর্বে ১০ টির মধ্যে ৮ টির সঠিক উত্তর দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আল-ইসলাহ একাডেমি।
দেয়াল পত্রিকায় জুনিয়র গ্রুপে প্রথম হয় বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এর পত্রিকা “কিউরিওসিটি” এবং সিনিয়রে যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজের দেয়াল পত্রিকা।
উপস্থিত বক্তৃতায় প্রথম স্থান লাভ করে বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখী কর্মকার এবং সিনিয়রে সরকারি পিসি কলেজের
মৌসুমি বৃষ্টি।
বিতর্কে জুনিয়র বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয় বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এর দল এরং শ্রেষ্ঠ বক্তা জাওয়াদ হাসান এবং সিনিয়র গ্রুপের বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয় সরকারি পিসি কলেজের দল, শ্রেষ্ঠ বক্তা সাদিয়া সিদ্দিকা কথা।
এরপর বিজ্ঞান মেলার জৈব বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রজেক্ট নির্বাচিত হয় বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এর ১০ম শ্রেণির ছাত্র অনিন্দর বায়োগ্যাস এবং ভৌত বিভাগে ৯ম শ্রেণির কাজি পিয়ালের প্রজেক্ট উন্নত সাইকেল।
সিনিয়রে জৈব বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রজেক্ট সরকারি পিসি কলেজের প্রাকৃতিক কীটনাশক এবং ভৌত বিভাগে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাধ।
পুরষ্কার বিতরনি অনুষ্ঠানে বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি পিসি কলেজের বহুল সাফল্য লক্ষ করেন অতিথিবৃন্দ। তাই তারা এ দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমান তালে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান।
এবারের এ বিজ্ঞান মেলায় মোট ২১ টি স্টলে ১৯১ টি প্রজেক্ট প্রদর্শনি হয়।
স্টল ক্রমিক নম্বর অনুসারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উল্লেক্ষ যোগ্য প্রোজক্ট সমুহ:
১. আল-ইসলাহ একাডেমি মোট প্রজেক্ট ৮ টি। উল্লেখযোগ্য ফিল্টার, রাতে জ্বরের ওষুধ, পাখা ইত্যাদি।
২. ড. কুদরত-ই-খুদা বিজ্ঞান ক্লাব (বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়) মোট প্রজেক্ট ১৬ টি। যেমন- পানি পরিশোধনাগার, ফিউজ ইন্ডিগেটর, সয়েল ময়েশ্চার টেস্ট, বায়োগ্যাস ইত্যাদি।
৩. যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজ আনে মোট ৭ টি প্রজেক্ট। সীমান্ত ব্রীজ, মশার কয়েল উল্লেখ যোগ্য।
৪. আদর্শ বিজ্ঞান পরিষদ ১০ টি প্রজেক্টের মধ্যে পেট্রলিয়াম জেলি, পেট্রল পাম্প নজর কাড়ে।
৫. আমলাপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় আনে মোট ১০ টি প্রজেক্ট। খাদ্যের ক্যালরি নির্ণয়, সৌর ফিল্টার ইত্যাদি।
৬. প্রফুল্ল চন্দ্র বিজ্ঞান ক্লাব মোট প্রদর্শিত প্রজেক্ট ৮ টি যার মধ্যে আছে পোকা ধরার আলোক ফাদ, পাওয়ার হাউজ ইত্যাদি।
৭. সরকারী পিসি কলেজ প্রজেক্ট ৬ টা। অন্যতম আছে এনার্জি সেভিং কার, স্বয়ংক্রিয় ক্লথ স্টোর ইত্যাদি।
৮. জাহানাবাদ বিজ্ঞান ক্লাব প্রজেক্ট আনে ৪ টা। এর মধ্যে রয়েছে দাউদের মলম।
৯. দশানী আদর্শ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫ টা প্রজেক্টের মধ্যে আছে ইন্ডিগেটর ম্যাপ ও সোলার কলিং বেল।
১০. বাগেরহাট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মোট প্রজেক্ট আনে ১৭ টি। উল্লেখযোগ্য হল কার সেফটি, রোড সেফটি, সোলার ওভেন, পাতার বিদ্যুৎ উৎপাদন ইত্যাদি। ১১. আশ্রয় বিজ্ঞান ও পরিবেশ সংগঠন, মোড়েলগঞ্জ প্রজেক্ট প্রদর্শন করে ৫টা। যেমন- ন্যাচারস এনার্জি, ধূমপান নাশক চকলেট, ডিজিটাল হোম সিকিউরিটি ইত্যাদি।
১২. বাগেরহাট সম্মেলনি স্কুলের মোট প্রজেক্ট ১০ টা। যথা- বৈদ্যুতিক নাগোরদোলা, ন্যাচারাল ফ্রিজ ইত্যাদি।
১৩. মাদামকুরী বিজ্ঞান ক্লাব (বাগেরহাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) মোট প্রজেক্টসংখ্যা ১২ টা। উল্লেখযোগ্য- লেবু দিয়ে বিদ্যুৎ, হারবাল শরবত ইত্যাদি।
১৪. বাগেরহাট বহুমুখি কলেজিয়েট স্কুল প্রজেক্ট ১০ টি। যেমন-ডিজিটাল ট্রাফিক আইন, কৃত্রিম আঙ্গুর ফল ইত্যাদি।
১৫. কেবি ফতেপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রোজেক্ট আনে ১৪ টা। অন্যতম ইলেকট্রিক হাউজ, ফায়ার এলার্ম ইত্যাদি।
১৬. শহীদ নায়েক আব্দুল জব্বার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯ টা প্রোজেক্টের মধ্যে অন্যতম ফায়ার ফ্লাস্ক, সৌরশক্তি ইত্যাদি।
১৭. রহিমাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রোজেক্ট ৮ টা। এর মধ্যে পেরিস্কোপ অন্যতম।
১৮. বাগেরহাট সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মোট প্রদর্শিত প্রজেক্ট ১২ টা। উল্লেখযোগ্য শক্তি পরীক্ষা, সাবমেরিন, গ্রীন হাউজ প্রজেক্ট ইত্যাদি।
১৯. বাগেরহাট টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ ৫ টি প্রজেক্ট। যথা- অত্যাধুনিক যত্রিবাহী যান, বন্যা সতর্কিকরণ ব্যাবস্থা ইত্যাদি।
২০. যদুনাথ স্কুল এন্ড কলেজ বিজ্ঞান ক্লাব আনে মোট ৮ টা প্রজেক্ট যার মধ্যে আছে ইঁদুর ধরা ফাদ, বৈদ্যুতিক হীটারসহ আরো অনেক প্রোজেক্ট।
২১. কেজেএসপিইউ (রাজাপুর) মাধ্যমিক বিদ্যালয় মোট প্রজেক্ট ৭ টা। উল্লেখযোগ্য- কাগজের টুল, ওয়াটার লেন্স ইত্যাদি।