বণ্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পাকিস্তান আমলে ১৭টি জেলার মধ্যে ১৩টিতে বিভিন্ন প্রজাতির বাঘ ছিল। আর এখন আছে কেবল সুন্দরবনে। আর বিশ্বজুড়ে মাত্র ১৩টি দেশে বাঘের বিচরণ রয়েছে, যার সংখ্যা চার হাজারের কাছাকাছি।
তবে এর মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখতে পাওয়া যায় শুধুমাত্র বাংলাদেশ এবং ভারতের সুন্দরবনে। তিনি বলেন, “বাঘ শিকারের চেয়ে বাঘের খাবার শিকার বেশি ভয়ানক। কিন্তু বন বিভাগ এ বিষয়ে কিছুই করতে পারছে না। প্রায় ১১ হাজার হরিণ প্রতি বছর মারা পড়ছে।”
হরিণ শিকার নিষিদ্ধ থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বাংলাদেশ অংশে সুন্দরবনের আশেপাশের ৮টি উপজেলার ৮০০ পরিবারের ওপর পরিচালিত এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, এসব এলাকার প্রতিটি পরিবার বছরে অন্তত এক কেজি করে হরিণের মাংস খেয়েছে। এ থেকেই বোঝা যায় বাঘের খাবার সঙ্কট কী হারে বাড়ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের জুলাই পর্যন্ত দুই বছরে লোকালয়ে বাঘ এসেছে ১২৩ বার। এর মধ্যে গণপিটুনিতে পাঁচটি বাঘ মারা গেছে। আর বাঘের আক্রমণে মারা গেছে ৫১ জন মানুষ ও ৩৬টি গবাদিপশু।
২০০০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১৯৩ জন মানুষ বাঘের আক্রমণে মারা যায়। এ সময়ে বাঘ মারা পড়েছে ২৩টি।
একটি বাঘের বিচরণের জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবনে গড়ে ২০ থেকে ৪০ বর্গ কিলোমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়৷বন উজাড়, বৈশ্বিক উষ্ণতায় সমুদ্রে পানির স্তর বেড়ে আবাসস্থল কমে যাওয়া এবং লোকালয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সেই বিচরণ এলাকা কমে যাচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া প্রতিবছর চোরা শিকারীদের হাতে গড়ে পাঁচটি বাঘ মারা পড়ে বলে জানান মনিরুল।
আর জ্ঞানভিত্তিক বন বিভাগ গড়ে তোলা না গেলে বাঘ রক্ষার কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক আনোয়ার।
তার মতে, বন বিভাগের সবচেয়ে দুর্বল বিভাগ ওয়াইল্ড লাইফ সার্কেলকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে কার্যকর করতে হবে, বাড়াতে হবে লোকবল।
বন বিভাগের তথ্যের ঘাটতি পূরণে উপযুক্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি বলেন, “বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য যখন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মিলে যায়, তখনই সেই ব্যবস্থাপনা এবং তথ্য কার্যকর হয়।”
তার মতে, বাঘ রক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দরকার সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগের।