স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাংলার জল-মাটি, সাধারণের মুক্তি চেতনার কবি মোহাম্মদ রফিকের ৭৩ তম জন্মদিন রোববার (২৩ অক্টোবর)।
১৯৪৩ সালে এই দিনে বাগেরহাট জেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রফিক।
সামছুদ্দীন আহমদ ও রেশাতুন নাহার দম্পতি প্রথম সন্তান মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কেটেছে বাগেরহাটের বৈটপুরে। আট ভাই বোনের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কবির লেখালেখি শুরু ‘সমকাল’ ও ‘কণ্ঠস্বর’ পত্রিকায় ।
পাকিস্তান আমলে ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্য রসদ যুগিয়েছেন কবি।
১৯৫৮ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তির পর তার বন্ধুত্ব হয় কথা সাহিত্যক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের সথে। নদী, জল ও কাঁদামাটির সঙ্গে যুক্ত জীবন চিত্র তুলে আনা আধুনিক বাংলার মননশীল কবি মোহাম্মদ রফিকের সাহিত্যিক চেতনায় প্রগাঢ় ছাপ ফেলেন তিনি।
১৯৬১ সালে ইন্টার মিডিয়েট (উচ্চ মাধ্যমিক) পাস করেন রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজিতে ভর্তির পর কবি মোহাম্মদ রফিক অংশ নেন সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে। আন্দোলন আর লেখালেখির কারনে সামরিক আইনে তাকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় হয়। জেলে জেতে হয়। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে থাকার কারনে তাকে বহিস্কৃত করা হয় রাজশাহী কলেজ থেকে।
সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মামলায় জয়লাভ করে পাস কোর্সে বি.এ পাশ করে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন কবি।
কীর্তিনাশা, কপিলা, গাওদিয়া, খোলা কবিতা, বিষখালী সন্ধ্যা বা কালাপানি, অশ্রুময়ীর শব বা নোনাঝাউ— বাংলা কবিতায় তার অনন্য সংযোজন।
১৯৫৮-৫৯ সালে কবি মোহাম্মদ রফিক যুক্ত হন সক্রিয় ছাত্র রাজনীতিতে, ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে। আইয়ুবি আমলে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট এবং পরবর্তীতে বগুড়া এবং রাজশাহী অঞ্চলে ছাত্র ইউনিয়নকে সংগঠিত করেন তিনি।
১৯৭১-এ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যোগ দেওয়া কবি যুদ্ধ করেন ১নং সেক্টরের হয়ে; অংশ নেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে কবির উচ্চরণ ছিলো সব সময়ে। স্বাধীন দেশে সৈরাচার এরশাদ রিরোধী আন্দোলনের সময় সামরিক শাসন ও শাসকের তথাকথিত কবি হওয়ার অভিলাষের বিরুদ্ধে তাঁর রচিত ‘সব শালা কবি হবে’ — কবিতাটি সে সময় আকাশ ছোয়া জনপ্রিয়তা পায়।
তার অন্যতম কাব্যগ্রন্থ – ‘বৈশাখী পূর্ণিমায়’ (১৯৭০), ‘ধুলোর সংসারে এই মাটি’ (১৯৭৬), ‘কীর্তিনাশা’ (১৯৭৯), ‘খোলা কবিতা’ ও ‘কপিলা’ (১৯৮৩), ‘গাওদিয়ায়’ (১৯৮৬), ‘স্বদেশী নি:শ্বাস তুমিময়’ (১৯৮৮), ‘মেঘে এবং কাদায়’ (১৯৯১), ‘রূপকথা কিংবদন্তি’ (১৯৯৮), ‘মৎস্যগন্ধা’ (১৯৯৯), ‘মাতি কিসকু’ (২০০০), ‘বিষখালি সন্ধ্যা’ (২০০৩), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (২০০৩) , ‘কালাপানি’ (২০০৬), ‘নির্বাচিত কবিতা’ (২০০৭), ‘নোনাঝাউ’ (২০০৮), ‘দোমাটির মুখ’ (২০০৯), ‘ত্রয়ী’ (২০০৯), ‘মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী -১’ (২০০৯-ঐতিহ্য), ‘মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী -২’ (২০১০-ঐতিহ্য)।
কবিতার পাশাপাশি ‘ভালোবাসার জীবনানন্দ’ (২০০৩), ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ (২০০১), ‘স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরাল’ (২০০২) তার অন্যতম গদ্যগ্রন্থ।
ভাষা ও সাহিত্য বিশেষ অবদানেন বাংলাদেশের জাতীয় এবং সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘একুশে পদক’ ২০১০, ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমী পুরষ্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন কবি।
বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতার পর ১৯৭৪ সালের মার্চে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কবি যোগদেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। দীর্ঘকাল শিক্ষকতার পর ২০০৯ সালে ২৯ জুন জাহাঙ্গীরনগর থেকে চাকরী জীবনের অবসরে যান কবি।
এইচ/এসআই/বিআই/২৩ অক্টোবর, ২০১৬
শিল্প-সাহিত্য, বাগেরহাট