স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক কবি কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র ৬০তম জন্মদিন।
দিনটি উদযাপনে রোববার (১৬ অক্টোবর) বাগেরহাটের মংলা উপজেলার মিঠেখালীতে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে রুদ্র স্মৃতি সংসদ (মিঠেখালী)।
১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশাল জেলার আমানতগঞ্জের রেডক্রস হাসপাতালে জন্ম নেন বাংলা সাহিত্যের ক্ষণজন্মা এই কবি।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬০তম জন্মদিন
জন্মদিন উপলক্ষে সকালে মিঠেখালীতে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি মিঠেখালী বাজার প্রদক্ষিণ করে কবির সমাধিতে (কবর) পুস্পস্তক অর্পণ করে।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। পরে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিকালে মিঠেখালী মাঠে আয়োজন করা হয় প্রীতি ফুটবল খেলার। এছাড়া সন্ধ্যায় মিঠেখালিতে রুদ্র স্মৃতি সংসদ কার্যালয়ে স্মরণ সভা, কবিতা আবৃত্তি ও রুদ্রের গান পরিবেশন করা হয়।
এদিকে রাজধানী ঢাকার জাতীয় যাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্মরণ সভার আয়োজন করেছে রুদ্র সংসদ, ঢাকা। সভা শেষে আপন সৃষ্টিতে কবিকে স্মরণে তার লেখা কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশিন করা হয়।
‘ভালো আছি ভালো থেকো/ আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ কিম্বা ‘বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে/ রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ’ উচ্চারণের এমন দ্রোহ-প্রেম অকাল প্রয়াত কবিকে আজও সব শ্রেণীর মানুষের কাছে কালজয়ী।
কবির শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে তাঁর নানাবাড়ি মিঠেখালি গ্রামে। সেখানকার পাঠশালাতেই শুরু হয় তার শৈশবের পড়াশুনার পাঠ। দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন সাহেবের মেঠ গ্রামে তাঁর নানার নামে প্রতিষ্ঠিত “ইসমাইল মেমোরিয়াল স্কুলে”।
শৈশন থেকেই পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়া ও কবিতা আবৃত্তির প্রতি ঝোক ছিলো তাঁর। ১৯৬৮ সালে মামাতো ভাইদের সঙ্গে নিয়ে নানীর ট্রাংক থেকে টাকা চুরি করে গড়ে তোলেন “বনফুল” নামের লাইব্রেরি। সেই সময় থেকেই কাঁচা হাতে লিখতে শুরু করেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।
ছেলে বেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিলো তার খুব আগ্রহ। কিশোর বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করেন মংলার প্রথম ক্রিকেট দল।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি ১৯৭২ সাথে ঢাকায় এসে দশম শ্রেণীতে ভর্তি হন ‘ওয়েষ্ট এন্ড হাইস্কুলে’। ওই সময় থেকেই নিয়মিতভাবে কবিতা, গান, গল্প ও নাটক লিখতে শুরু করেন কবি।
ওই ২৬ নভেম্বর ‘দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় তাঁর কবিতা ‘আমি ঈশ্বর আমি শয়তান’।
এরপর থেকে তার নিয়োমিত লেখনিতে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা সাহিত্য। ১৯৭৯ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয় রুদ্রের প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘উপদ্রুত উপকূল’।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন প্রেম, দ্রোহ, স্বপ্ন ও সংগ্রাম। নিজেকে মিলিয়ে নিয়েছিলেন আপামর নির্যাতিত মানুষের আত্মার সঙ্গে; হয়ে উঠেছিলেন তাদেরই কন্ঠস্বর। শিল্পমগ্ন উচ্চারণে নিজেকে করেছেন অবিস্মরণীয়, তারুণ্যের প্রেরণা।
রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর রচনার মধ্যে রয়েছে কাব্যগ্রন্থ ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’(১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ’(১৯৯০)।মাত্র ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও অসংখ্য গল্প, কাব্যনাট্য এবং সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ করেছেন তিনি।
যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। ১৯৯১ সালের ২১ জুন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ পরলোকগমন করেন।
এইচ/এসআই/বিআই/১৬ অক্টোবর, ২০১৬