সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
অতি বৃষ্টিতে জলমগ্ন বাগেরহাটের সহস্রাধীক হেক্টর জমির পানের বরজ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা অবস্থা পান চাষিদের।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে জেলার পান চাষিদের এক হাজার ১০ হেক্টর জমির বরজ প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র।
এদিকে, পানি ঢুকে বরজগুলোর সব পান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় এমন বিপর্যয়ে সারাদেশে পান সরবরাহ ও বাজারের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
জেলার পান চাষ সমৃদ্ধ কয়েকটি এলাকা ঘুরে, পান চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পানের ক্ষয়ক্ষতির নানা তথ্য জানা গেছে।
কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় বাগেরহাট সদরের কাড়াপাড়া, শিংড়াই, দেওয়ালবাটি, যাত্রপুর, বারুইপাড়া, বিষ্ণুপুর, পাটরপাড়া, ষাটগুম্বুজ, বাগমারা ছাড়াও জেলার ফকিরহাট, কচুয়া, চিতলমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের পান চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সরেজমিনে কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পানের বরজে পানি প্রবেশ করেছে। যেসব বরজ থেকে পানি নামছে সেসব বরজে পানের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে।
সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের শিংড়াই গ্রামের পান চাষি ইদ্দিস মোল্লা (৬২) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পান চাষ আমাদের একমাত্র আয়ের মাধ্যম। গতবছরও বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় বরজের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ঋণ করে এবারও বরজ তুলেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির পানিতে তিনটি বরজেই পানিতে ডুবেছে।
পানি নামলেও পানের পাতা হলুদ হয়ে ঝড়ে পড়ছে।
পাশের গ্রাম দেওয়ালবাটি হালিমা আক্তার জানান, গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা পান চাষ। সারা বছর পরিবারের সবাই মিলে বরজের পরিচর্যা করে পান বিক্রি করে সংসার চালান। এবার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় এলাকার সব বরজ প্লাবিত হয়েছে।
একই গ্রামের শেখ আরসাদ আলী (৫২) বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, জলাবদ্ধতার কারণে আমার ৫টি বরজই তলিয়ে যায়। এখনও দুটি বরজের পানি সম্পূর্ণ নামেনি।
পানি সরাতে স্যালো মেশিন দিয়েও সেচ দিয়ে নিস্কাসনের চেষ্টা করছি। কিন্তু বরজ বাঁচাতে পানিনি। এখন সবগুলো বরজের পান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে; গাছ মরতে শুরু করেছে। ঋণের বোঝা বাড়ছে।
এ অবস্থায় সরকারি সাহায্য ছাড়া তাদের মতো ক্ষুদ্র পান চাষিদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় পান চাষিরা বছর বছর তাদের দুর্ভোগ লাঘবে একাধিক স্লুইজগেট নির্মাণ, খাল খনন করে সহজে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানিয়েছেন।
বাগেরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাদেব চন্দ্র সানা জানান, সদরে মোট ৪৮৫ হেক্টর জমির বরজের মধ্যে বৃষ্টির পানি ও জলাবদ্ধতায় ১০০ হেক্টর বেশি জমির বরজের ক্ষতি হয়েছে। পান গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে ক্ষতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা তার।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ নজরূল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, পান এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল। জলাবদ্ধতার কারণে চাষিদের দুর্ভোগ যেন না বাড়ে এজন্য স্লুইজগেটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। যাতে দ্রুত পানি নেমে যেতে পারে।
এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আফতাব উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরু দিকের বৃষ্টিতে পানসহ জেলার অধিকাংশ কৃষিজমি বীজতলা ও সবজির মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নেমে গেলেও জলাবদ্ধতায় পান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে।
এইচ/এসআই/বিআই/২৬ আগস্ট, ২০১৬