অলীপ ঘটক, চিফ নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে বাগেরহাটের ৮০ ভাগ মাছের ঘের। পানির নিচে জেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, পানের বরাজসহ অন্যান্য সবজি ও ফসলের মাঠ।
বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাট পৌর শহরসহ জেলার অধিকাংশ উপজেলায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার কয়েক হাজার মানুষ।
এছাড়া প্রবল বৃষ্টির মাঝে ঝড়ো বাতাসে জেলার চিতলমারি উপজেলায় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে এবং দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে।
বাগেরহাট পৌরসভার নাগেরবাজার, বাসাবাটি, খারদ্বার, আলীয়া মাদ্রাসা সড়ক, মিঠাপুকুরপাড়, হরিণখানা, রেলরোড, সাহাপাড়া ও হাড়িখালি এলাকার রাস্তায় ও বাড়ির উঠানে বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। বাসা-বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় রান্না খাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেক পরিবারের।
ভিডিও-
টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের মাঝে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে নিন্ম আয়ের মানুষ।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া, বেমরতা, বিষ্ণুপুর, ষাটগম্বুজ, ডেমা ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। ঘের মালিকরা তাদের ঘেরের আইলে নেট (জাল) দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুয়ায়ী, রামপাল উপজেলায় ৬০ ভাগ, মোল্লাহাটে ৯০ ভাগ, কচুয়াতে ৮০ ভাগ, ফকিরহাটে ৭০ ভাগ, চিতলমারিতে ৭০ ভাগ, মোরেলগঞ্জে ৭০ ভাগ, মংলাতে ৮০ ভাগ ও সদর উপজেলায় ৭০ ভাগ মাছের ঘের ভেসে গেছে।
ভিডিও-
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাফুজুর রহমান মাফুজ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আমার ওয়ার্ডের রাধাবল্লভ, কাঠিগোমতি, গোবরদিয়ার তিনটি গ্রামের অন্তত আট হাজার মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের। পানি নামতে না পারায় তাদের রান্না খাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বাড়িঘরে পানি উঠে যাওয়ায় কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারছেনা। এতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েছেন নিন্ম আয়ের মানুষ।
বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষি সমিতির আহ্বায়ক ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে জেলার অধিকাংশ মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। আর যেগুলো পানি ছুইছুই করছে সেগুলোতে নেট দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছেন ঘের মালিকরা। এতে ঘের মালিকরা কোটি কোটি টাকার ক্ষতিরমূখে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ ঘের মালিকদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক (ডিডি) মো. আবতাব উদ্দিন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গত ২৪ ঘন্টায় জেলার নয়টি উপজেলায় ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে জেলায় মোট ২২ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, পানের বরাজসহ অন্যান্য সবজির মাঠ পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
পানি দ্রুত নেমে না গেলে কৃষকরা দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতিরমূখে পড়তে পারে বলে ওই কর্মকর্তা আশংকা করছেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আব্দুল অদুদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, দেশে চিংড়ি উৎপাদনে বাগেরহাট জেলা অন্যতম। টানা বর্ষণে জেলার ৮০ ভাগ মাছের ঘের ভেসে গেছে। পানিতে ভেসে সাদাসোনা খ্যাত গলদা ও বাগদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ বেরিয়ে গেছে।
ফলে ঘের মালিকরা দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতিরমূখে পড়বেন বলে আশংকা করছেন ওই মৎস্য কর্মকর্তা।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে জেলার নয়টি উপজেলার সত্তর থেকে আশি ভাগ মাছের ঘের ভেসে গেছে। রোপা আমনের বীজতলাসহ সবজির মাঠ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে জেলার চিতলমারি উপজেলায় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে গেছে এবং অন্তত দুই শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি পড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কৃষি, মৎস্য বিভাগসহ সবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছবি ও ভিডিও: মনজুর মোরশেদ প্রিন্স, আনোয়ার হোসেন মেজবাহ/বাগেরহাট ইনফো ডটকম
এজি/এসআই/বিআই/২২ আগস্ট, ২০১৬