সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট শহরের যদুনাথ কলেজিয়েট স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে ক্লাশরুম থেকে অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে কথিত এক ওলামা লীগ নেতা গ্রেপ্তারের পর সমঝোতায় মুক্তি পেয়েছে।
শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে বিদ্যালয়ে ক্লাশ শুরুর আগে শ্রেণীকক্ষ থেকে পঞ্চম শ্রেণী ছাত্র সজীব ইসলাম হৃদয়কে (১১) ফুঁসলিয়ে অপহরণের চেষ্টা হয়।
এ ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশ মো. ইয়াছিন শেখ (৪০) এক ব্যক্তির পরিচয় সনাক্ত করে। পরে শহরের হরিণখানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
তবে সন্ধ্যায় বাগেরহাট মডেল থানায় এ বিষয়ে শিশু হৃদয়ের পরিবারের সাথে সমঝোতা হয়েছে; কোন মামলা হয়নি।
শিশু শিক্ষার্থী সজীব ইসলাম হৃদয়ের বাড়ি শহরের হরিণখানা এলাকায়। তার বাবা লিপন শেখ একটি দূরপাল্লার পরিবহণ বাসের বাগেরহাট কাউন্টারে দায়িত্বরত।
ছেলেটির মা ঢাকায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী। বর্তমানে তিনি এক নবজাতক নিয়ে মাতৃত্বকালীণ ছুটিতে আছেন। হৃদয় নানাবাড়ি থেকে লেখাপড়া করে। হৃদয়ের অভিভাবকরা ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
গ্রেপ্তার মো. ইয়াছিন শেখ জেলার রামপাল উপজেলার চন্দ্রখালী গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে। বর্তমানে তিনি শহরের হরিণখানা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
নিজেকে একজন হাফেজ ও জেলা ওলামালীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন মসজিদে ইমামতি করে আসছি।
তবে বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ইমামতি ছেড়ে শহরের এক মাদ্রাসা শিক্ষকের সাথে হজ্বযাত্রীদের হজ্বে পাঠানোর কাজে সহায়তা করছেন।
তবে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানিয়েছেন, বাগেরহাটে বর্তমানে ওলামালীগের কোন কমিটি নেই এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমও স্থবির। ইয়াছিন শেখ নামে ওলামালীগের কোন জেলা সাধারণ সম্পাদকের কথা তার জানা নেই।
যদুনাথ কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার চক্রবর্ত্তী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, শনিবার সকাল নয়টার দিকে সজিব ইসরাম হৃদয়সহ দু’তিন ছাত্র পঞ্চম শ্রেণীর শ্রেণীকক্ষে বসে ছিলো। এসময় টুপি-পাঞ্জাবি পরা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি ঐ শ্রেণীকক্ষে ঢুকে হৃদয়েরর কাছে তার বাবা-মায়ের নাম জানতে চান।
‘তিনি হৃদয়কে বাইরে আসতে বলেন এবং চকলেট ও বিস্কুট কিনে দেয়ার প্রলোভন দেন। কিন্তু হৃদয় রাজি না হওয়ায় তিনি তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করেন। এসময় হৃদয় চিৎকার করলে প্রতিষ্ঠানের ঝাড়ুদার এগিয়ে আসেন। তখন ঐ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে দ্রুত বের হয়ে রাস্তায় কয়েক ব্যক্তিসহ অপেক্ষমান একটি ইজিবাইকে চড়ে চলে যান।’
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, বিষয়টি জানার পর শিক্ষকরা ছেলেটির অভিভাবকদের খবর দেন এবং বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে ঘটনাটি জানান। পরে বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান বিদ্যালয়ে এসে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে লোকজনের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তিকে সনাক্ত করেন এবং আটক করেন।
ছেলেটির মা রাখী বেগম জানান, সকালে তিনি ও তার স্বামী লিপন শেখ ঘরে শুয়ে ছিলেন। মুঠোফোনে ছেলেকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে জেনে তিনি বিদ্যালয়ে যান। সিসি টিভি‘র ফুটেজ দেখে তিনি ইয়াছিন নামে ঐ ব্যাক্তিকে চিনতে পারেন।
ইয়াছিন বেশ কয়েক বছর আগে তাদের পাশের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ইয়াছিনের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ বা সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান খান বলেন, ইয়াছিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। সে প্রথমে অসংলগ্ন বিভিন্ন কথা বলছিল।
সন্ধ্যায় হৃদয়ের বাবা-মা থানায় আসতে। তারা বিষয়টি ভুল বুঝাবুঝি বলেছে। গ্রেপ্তার ইয়াছিন ওই ছেলের বাবা লিপন শেখ বন্ধু। বিষয়টি সমঝোতা হয়েছে।
এএইচ/এসআই/বিআই/২০ আগস্ট, ২০১৬