অলীপ ঘটক, চিফ নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের সুন্দরবন ও সংলগ্ন এলাকায় বেঙ্গল টাইগারের আক্রমণে ২৬০ জন নিহত হয়েছেন। আর এই সময়ে বাঘের আক্রমণে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪৫ জন।
একই সময়ে সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার মারা পড়েছে ৩২টি। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের সংরক্ষিত নথি থেকে পাওয়া গেছে।
তবে বেসরকারি হিসাবে এই সময়ে অর্ধশতাধিক বাঘ মারা পড়েছে।
এদের মধ্যে লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় গ্রামবাসীর পিটুনীতে ১২টি বাঘের মৃত্যু হয়। অন্যগুলো মারা গেছে চোরা শিকারীদের হাতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বা বয়স জনিত কারণে।
সুন্দরবন বিভাগের বনসংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন,২০০১ সাল থেকে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে ১৭টি বেঙ্গল টাইগার মারা গেছে। এসময়ে বাঘের আক্রমণে একজন নারীসহ মোট ২৬ জন নিহত হন। এদের মধ্যে ময়না নামে মংলা উপজেলার জয়মনি এলাকার এক বৃদ্ধ গ্রামবাসী ছাড়া বাকি সবাই বনজীবী।
নিহতদের মধ্যে ১৪ জনের বাড়ি সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায়, ৬ জনের বাড়ি মংলা উপজেলায়, ১ জনের বাড়ি রামপাল উপজেলায় এবং অপর পাঁচজন খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা।
একই সময়ে চারটি পৃথক ঘটনায় বাঘের আক্রমণে একজন বনকর্মীসহ নয় জন আহত হন। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগে বার্ধক্যজনিত কারণে, লোকালয়ে ঢুকে পড়ে, ২০০৭ সালের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে এবং চোরাশিকারীদের হাতে মোট ১৭টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মারা পড়ে। এর মধ্যে বন সংলগ্ন মংলা ও শরণখোলা উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় চারটি বাঘকে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বাভাবিক মৃত্যু হয় অন্তত চারটি বাঘের। একটি বাঘ মারা যায় ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সিডরের জলোচ্ছ্বাসে। বাকি আটটি বাঘ চোরা শিকারীদের হামলায় নিহত হয়।
তবে বেসরকারি হিসাবে, চোরা শিকারীদের হামলা এবং আক্রমণের কারণে বাঘ হত্যার সংখ্যা আরও বাড়বে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার হওয়া বাঘের চামড়া ও হাড়ের হিসাব করলে এই সংখ্যা অর্ধশত অতিক্রম করবে।
সাম্প্রতি সুন্দরবনে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাঘ গণনার প্রধান কুশলি জাহিদুল কবির বলেন, সর্বশেষ শুমারি অনুয়ায়ী, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্য ১০৬টি। বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে সরকার ‘বাংলাদেশ টাইগার অ্যাকশন প্ল্যান ২০০৯-২০১৭’ বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বাঘ রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি, বাঘের আক্রমণ থেকে বন সংলগ্ন লোকালয়ের জানমাল এবং মানুষের হাত থেকে লোকালয়ে চলে আসা বাঘ রক্ষায় পরীক্ষামূলকভাবে ৩১টি টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করে কাজ করছে।
বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন সংশোধন করে বাঘ হত্যায় শাস্তি ও অর্থদণ্ড বাড়ানো হয়েছে। ২০১১-১২ ও ২০১২-১৩ অর্থ বছরে সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে হতাহতদের মধ্যে ৪৫টি পরিবারকে মোট ৪০ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রক্ষক। বাঘ কমলে বাড়বে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের উপর হুমকি। তাই শুধু বাঘ নয়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় এবং সকল জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী জগতকে রক্ষায় আরও উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে। আর তা না হলে বিপন্ন হবে বাংলাদের গৌরব বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১০ সালে বেঙ্গল টাইগারকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাঈদ আলী বলেন, বাঘ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির বৃদ্ধির লক্ষে বাংলাদেশে ২০১০ সালে ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ (ডব্লিউটিবি) সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের মুন্সীগঞ্জে প্রথম বাঘ দিবস করে। এর পর থেকে প্রতিবছর ২৯ জুলাই বাংলাদেশে বিশ্ব পালিত হয়ে আসছে।
দিবসটি উপলক্ষে এ বছর কোন জাতীয় অনুষ্ঠান না থাকলেও বন বিভাগের উদ্যোগে শুক্রবার সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ, চাঁদপাই রেঞ্জ, খুলনা রেঞ্জ ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে র্যালি ও আলোচনা সভা আয়োজন করেছে।
এজি/এসআই/বিআই/২৯ জুলাই, ২০১৬