স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের ১২ যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল।
শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন গঠিত বেঞ্চ এই পরোয়ানা জারী করে।
বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক ওই মামলার পরোয়ানাভুক্ত চার আসামীকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে ট্রাইবুন্যাল।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলিগাঁতি গ্রামের প্রয়াত মোক্তার আলী খানের ছেলে খান আকরাম হোসেন (৬০), একই উপজেলার চাপড়ি গ্রামের প্রয়াত শেখ মোসলেম উদ্দিনের ছেলে শেখ মোহম্মদ উকিল উদ্দিন (৮২), কচুয়া উপজেলার যশোরদি গ্রামের প্রয়াত গফুর আলী মোল্লার ছেলে ইদ্রিস আলী মোল্লা (৬৪) এবং একই উপজেলার উদনখালি গ্রামের প্রয়াত সফদার মোল্লার ছেলে মো. মকবুল মোল্লা (৭৯)।
বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভুক্ত যুদ্ধাপরাধী খান আকরাম হোসেনে বাগেরহাট শহরের পুরাতন বাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া ইদ্রিস আলী মোল্লা এবং মো. মকবুল মোল্লাকে কচুয়া উপজেলার যশোরদি গ্রাম ও উদনখালি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় (মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) বাগেরহাটের কচুয়া ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ৭টি অভিযোগ আনা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল বাগেরহাটের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে জেলার ১২ যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ওই সময়ে সংগঠিত অপরাধের সত্যতা পায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের তদন্ত কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. হেলাল উদ্দিন শনিবার দুপুরে বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, খান আকরাম হোসেন ও তার সহযোগিরা সশস্ত্র লোকজন ১৯৭১ সালের ৫ মে কচুয়া উপজেলার শাঁখারীকাঠি বাজারে গিয়ে নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ৪২ জনকে হত্যা করে। এছাড়া এরা মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগীতাকারী এ সব হত্যাকারীরা স্থানীয়ভাবে রাজাকার নামে পরিচিত।
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাট জেলায় মোট ৬৩টি মামলা হয়েছিল। মামলাগুলো তদন্ত করে ডাকরা গণহত্যা, শাঁখারীকাঠি গণহত্যাসহ কিছু ঘটনা আমলে নেয়া হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে বাগেরহাটের ১২ রাজাকারকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ জমা দেয়া হয়। আদালত অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে শনিবার শুনানী শেষে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারী করেন।’
গ্রেপ্তারী পরোয়ানাভুক্ত চার আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদেরকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। মামলার বাকী আসামীদেরও গ্রেপ্তাতারের চেষ্টা চলছে।