সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে পূর্ব সুন্দরবনে বনজীবীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে বন বিভাগ।
বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, রোববার (২৫ জুন) সকাল থেকে বনজীবীরা বনবিভাগ থেকে পাশ নিয়ে পূর্ব সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে।
সিএফ বলেন, চলতি বছরে ২৭ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল এক মাসের মধ্যে সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় চার বার দেয় দুর্বৃত্ততা। এর পর ‘বিশেষ সতর্কতা’ হিসেবে গেল ২৯ এপ্রিল সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ এলাকায় (চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে) দেশি-বিদেশি পর্যটক বাদে বনজীবীসহ সাধারণের সব ধরণের প্রবেশ ও পাস-পারমিট দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বার বার আগুন দেওয়ার প্রেক্ষিতে পূর্ব সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ৫৮ দিন পর মানবিক দিক বিবেচনায় রোববার থেকে বনজীবীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হচ্ছে।
এখন থেকে আবার আগের মতো নির্দিষ্ট রাজস্ব প্রদান করে বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বনজীবীরা প্রবেশ করতে পারবে এবং মাছসহ বৈধ বনজ সম্পদ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। তবে আগের মতো সুন্দরবনের ডলফিনের অভয়াশ্রম এবং মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে মাছ ধরতে নিষেধাজ্ঞা থাকা নদী খাল গুলোতে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকছে।
এছাড়া সাম্প্রতিক আগুনে পুড়ে যাওয়া পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্ট একায়ায় প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হয়েছে। ওই এলাকাতেও কোন প্রকার পাস পারমিট দেওয়া হবেনা বলে জানিয়েছেন ডিএফও।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্য অনুয়ায়ী, চলতি বছরের ২৭ মার্চ পূর্ব সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী এলাকায় প্রথম দফা আগুনে বনের ১ দশমিক ৬৬ একর জায়গা জুড়ে পুড়ে যায়। এরপর ১৩ এপ্রিল নাংলী এলাকায় দ্বিতীয় দফায় আগুন লাগে পুড়ে যায় প্রায় সাড়ে আট একর বনাঞ্চল। এ ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় ১৮ এপ্রিল একই এলাকায় আবার আগুন লাগে। এতে বনের আধা একর জায়গার গাছপালা আগুনে পুড়ে যায়।
সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল ধানসাগর স্টেশনের তুলাতুলী এলাকায় আবারও আগুন লাগে। যাতে পুড়ে যায় বনের তিন একরের বেশি জায়গার গাছ-পালা ও লতা-গুল্ম।
এক মাসের চারবার সুন্দরবনে আগুন লাগার পেক্ষিতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৯ এপ্রিল থেকে বন বিভাগ পূর্ব সুন্দরবনে পর্যটকবাদে সব বনজীবীদের প্রবেশ অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ করে।
এছাড়া গঠিত তদন্ত কমিটি আগুন লাগানোর জন্য বন সংলগ্ন বাগেরহাটে শরণখোলার স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাসহ লোকালয়ের কিছু দুর্বৃত্তদের সম্পৃক্ততা পান।
শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহজাহান হাওলাদার ওরফে শাহজাহান শিকারি ও তাঁর পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে বন বিভাগ ১৬ এপ্রিল আদালতে বন আইনে মামলা করে। এর পরের আগুনের ঘটনাগুলোতেও স্থানীয়দের সম্পৃক্তার প্রমান পেয়ে আদালত ও থানায় মোট তিনটি মামলা করে বন বিভাগ।
এসব মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত এজাহারনামীয় একজন ও সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করেছে।
প্রসঙ্গত,বনের উপর নির্ভরশীল সাধারণ বনজীবীরা প্রথম থেকেই পুনরায় পাস-পারমিট প্রদানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল।
এজি/এসআই/বিআই/২৫ জুন, ২০১৬