অলীপ ঘটক, চিফ নিউজ এডিটর | বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বাগেরহাট সদর উপজেলার সরকরি ১২টি দপ্তরকে দুর্নীতি মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ নজরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে উপজেলা প্রশাসনের ১২টি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এই ঘোষণা দেন।
তবে দুর্নীতির আখড়া বলে পরিচিত ভূমি কমিশনারের দপ্তরটিকে এখনই দূর্নীতি মুক্ত করার ঘোষণা দিতে না পারলেও খুব শিগগির ভূমি অফিসকেও দুর্নীতি মুক্ত করতে পারবেন বলে আশা তার।
প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সহযোগি সংগঠন সচেতন নাগরিক কমিটিসহ (সনাক) বাগেরহাটের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
তারা বলছেন, প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়ে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারী দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীরা বছরের পর বছর দূর্নীতিতে যেভাবে নিমজ্জিত হয়ে আছে তাতে এবার যদি তারা দুর্নীতি মুক্ত হয়ে জনগনের সেবক হয়ে ওঠে তাহলে উপজেলার লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।
উপজেলা প্রশাসনের যে দপ্তরগুলোকে দূর্নীতি মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো হলো- কৃষি, মৎস্য, শিক্ষা, সমবায়, যুব উন্নয়ন, সমাজসেবা, প্রাণী সম্পদ, স্থানীয় সরকার, বিআরডিবি, আনছার ভিডিপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক বিভাগ।
বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ নজরুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রসাশনের ১৩টি সরকারি দপ্তর রয়েছে। আমি এখানে যোগদানের পর উপজেলা প্রশাসনকে কিভাবে দুর্নীতিমুক্ত করা যায় তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একাধিকবার আলোচনা করি। দপ্তরগুলোকে দুর্নীতি মুক্ত করতে একটি কৌশল পত্র প্রনয়ন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১২টি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আমার সাথে একমত পোষণ করায় আজ এই ঘোষণা করলাম।
এখন থেকে উপজেলার সকল নাগরিক কোন প্রকার ঘুষ লেনদেন ছাড়াই তাদের সেবা পাবে। দূর্নীতি মুক্ত ঘোষণা করার পরেও যদি এসব দপ্তরের কর্মচারীরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে কৌশল পত্রের সোস্যাল অডিটের আওতায় জনগণই তাদের বিচার করবে।
ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে না থাকায় তা দুর্নীতি মুক্ত ঘোষণা করতে পারিনি। আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভূমি অফিসকে দূর্নীতি মুক্ত ঘোষণা করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
তবে সাধারণ জনগনের প্রশ্ন প্রকৃত পক্ষেই দুর্নীতিমুক্ত হবে তো মাঠ প্রশাসনের সরকারি দপ্তরগুলো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগেরহাটের একাধিক নাগরিক বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, উপজেলার প্রত্যেক নাগরিকের ভূমি অফিসে কাজ থাকে। আর দুর্নীতির মহা উৎসবের জায়গা হচ্ছে এই ভূমি অফিস। যেখানে টাকা না দিয়ে ফাইলই নড়ে না। সেই দপ্তরটিকে প্রশাসন দুর্নীতি মুক্ত ঘোষণা করতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ওই নাগরিকরা।
বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। কোন কাজই টাকা ছাড়া যেন কেউ করতেই চায় না। প্রশাসন যে ঘোষণা দিয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে উপজেলার ১০ ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ সহজে নাগরিক সেবা পাবে বলে মত দেন তিনি।
সনাক বাগেরহাটের সভাপতি এ্যাডভোকেট রামকৃষ্ণ বসু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, সরকারি কর্মচারীরা যেমন ঘুষ নিয়ে অপরাধ করছেন তেমনি আমরা নাগরিকরা দ্রুত কাজটি উদ্ধার করতে তাদের ঘুষ দিচ্ছি। রন্ধ্রে রন্ধ্রে দূর্নীতিতে ভরে গেছে। বাগেরহাটে প্রশাসন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু আমরা এটির বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মুজিবর রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, প্রশাসনের সব দপ্তরেই কমবেশি দূর্নীতি রয়েছে। এসব দপ্তরকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দূর্নীতি মুক্ত করতে যে উদ্যোগ নিয়ে তার সঙ্গে আমি একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এসব দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জনগণের সেবক হবে এমটাই আশা করছি।
মতবিনিময় সভায় বাগেরহাট সদর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আজগর আলী, সমবায় কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা, বাগেরহাটে টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার শেখ বশিরুল আলম, বাগেরহাট প্রেসকাবের সভাপতি মো. শাহ আলম টুকু, সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামানসহ বাগেরহাটে কর্মরত গনমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এজি/এসআই/বিআই/১৪ জুন, ২০১৬