স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট । বাগেরহাট ইনফো ডটকম
বৃষ্টি ঝরিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অতিক্রম করে গেছে ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’। ঝড়ের আতঙ্ক কাটিয়ে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে।
বাতাস ও বৃষ্টিপাত থেমে যাওয়ায় শনিবার (২১ মে) বিকাল থেকে জনজীবণ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে এই অঞ্চলে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কাটিয়ে তিন দিন পর শনিবার (২১ মে) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে পূর্ব আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে।
বাগেরহাটের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী এলাকা ঘুরে জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে বাগেরহাটের কোথাও কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে টানা বৃষ্টিপাতের জেলের কয়েকটি নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি খবর পাওয়া না গেলেও রোববার (২২ মে) বিকাল পর্যান্ত কন্ট্রল রুমগুলো চালু রাখা হবে।
উপকূলীয় সাউথখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে আমার ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার মানুষের প্রানহানি হয়। এজন্য দুর্যোগ আসলে এই এলাকার মানুষ আতংকিত হয়ে পড়ে। রোয়ানুর পূর্বাভাস দেয়ার পর এখানের এগারোটি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। শক্তিশালী রোয়ানু গতিপথ পরিবর্তন করায় আমরা রক্ষা পেয়েছি।
সকাল খেকে বাগেরহাটের মংলায় অবস্থান করা বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আজমুল হক জানান, ঝড়ের কারণে মংলা উপজের পশুর নদী তীরবর্তী চিলা ও জয়মনি এলাকার ২ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ও সাইলোতে আশ্রয় নেয়। দুপুরের পর থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম জানান, দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ছিল। দুর্যোগে যাতে জেলার কোন মানুষের প্রানহানি না ঘটে সেজন্য মাইকিং করে সেচ্চাসেবীদের দিয়ে ১৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে অন্তত দশ মানুষকে সরিয়ে আনা হয়।
রোয়ানু গতিপথ পরিবর্তন করায় বাগেরহাট জেলা রক্ষা পেয়েছে।
মংলা বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, শক্তিশালী রোয়ানু গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় মংলা বন্দরে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বর্তমানে বন্দর স্বাভাবিক রয়েছে। মংলা বন্দরে স্পেলাল এলার্ট ৩ নামিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজগুলো থেকে পণ্যবোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজ সাভাবিক ভাবে শুরু হবে।
এদিকে ঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর তীরবর্তী বেড়িবাঁধটির তাফলিবাড়ি পয়েন্টের তিন ভাগের এক ভাগ নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
বাগেরহাট পনি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, বাগেরহাটের বেশ কয়েকটি বেড়ি বাঁধ ঝুকিপূর্ণ।মধ্যে শরণখোলা উপজেলার বেড়িবাঁধের তাফালবাড়ি এলাকায় কিছু এলাকা ভেঙে গেছে। তবে এই অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশের কোন সম্ভাবনা নেই।
তাছাড়া বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ওই এলাকায় একটি টেকসই বিকল্প বাদ নির্মানের কাজ চলোমান রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক আফতাব উদ্দিন বলেন, গত ৩৬ ঘন্টায় জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেলার কিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ফসলের তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
এছাড়া সুন্দরবনেরও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।