এক মাসের মধ্যে সুন্দরবনে চতুর্থবার আগুন লাগার পর চাঁদপাই রেঞ্জে জুড়ে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি করেছে বনবিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় প্রবেশের সব ধরনের পাস-পারমিট দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ এবং প্রবেশে নিষেধাজ্ঞ্য দেওয়া হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বারবার আগুনের ঘটনায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে চাঁদপাই রেঞ্জে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এখন থেকে বনের এই এলাকায় জেলে, মৌয়াল, বাওয়ালী বা সাধারণ মানুষের চলাচল সংরক্ষিত করা হবে।
এদিকে, আগুন লাগার ২৬ ঘন্টাও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আসেনি সুন্দরবনের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নাম্বার কম্পার্টমেন্টের তুলাতলায় লাগা আগুন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নম্বর কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা এলাকায় আগুন লাগে। এখনও ধোঁয়া দেখা গেলেও আগুন নিয়ন্ত্রনে আছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ।
অন্যদিকে সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগার ঘটনার কারণ উদঘাটনে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (আইন) মো. মোজাহেদ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সেখ মো. তৈহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কমিটি গঠনের কথা জানানো হয় বলে কমিটির সদস্য সচিব বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ জানান।
জহির উদ্দিন বলেন, তদন্ত কমিটির অপর চার সদস্যের মধ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিসের একজন করে প্রতিনিধি থাকছেন।
“এই কমিটি আগামী ১০ কার্য দিবসের মধ্যে সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগার কারণ উদঘাটন ও আগুনে বনভূমির ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করে প্রতিবেদন জমা দেবে।”
তিন বলেন, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত চাঁদপাই রেঞ্জজুড়ে ‘বিশেষ সতর্কতা’ জারি থাকবে এবং রেঞ্জে এলাকায় প্রবেশের জন্য সব ধরনের পাস-পারমিট বন্ধ থাকবে।
এর আগেও বুধবারের এই আগুনের ঘটনা তদন্তে সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, বনবিভাগ ও স্থানীয় গ্রামবাসী একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। যেখানেই ধোঁয়া দেখছে সেখানেই পানি ছিটানো হচ্ছে।
প্রচণ্ড তাপদাহ ও বাতাসের তীব্রতা থাকায় আগুন নেভাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে উল্লেখ করে সাইদুল বলেন, “তবে আগুন যাতে নতুন এলাকায় বিস্তৃতি লাভ না করেত পারে সেজন্য ওই এলাকায় ফায়ার লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। আগুন পুরোপুরি না নেভানো গেলেও তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মানিকুজ্জামান বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহ, প্রবল বাতাস তো রয়েছে। তার উপর পানি আনতে হচ্ছে দূর থেকে। তাই আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
এর আগে গত ২৭ মার্চ, ১৩ ও ১৮ এপ্রিল ধানসাগর স্টেশনের নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আগুন লাগে। সে সময় বন বিভাগের পক্ষ থেকে তদন্ত করে স্থানীয় দুর্বৃত্তদের দায়ী করা হয়।
ওই ঘটনায় দুটি মামলাও করে বনবিভাগ। তবে এখনও আসামিদের কাউকে ধরা যায়নি।
এ ব্যাপারে সাইদুল ইসলাম বলেন, “গত দুবার সুন্দরবনে যে আগুন লেগেছে তা ছিল নাশকতা। স্থানীয় গুটিকয়েক দুর্বৃত্ত নিজেরা লাভবান হতে সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে, তা আমাদের তদন্তে উঠে এসেছে। এই ঘটনায় আমরা বন আদালত ও থানা পুলিশে পৃথক দুটি মামলা করেছি।”
এই মামলার কারণে চক্রটি ক্ষুব্ধ হয়ে আবারও পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন দিয়েছে বলে দাবি খুলনা অঞ্চলের সিএফ জহির উদ্দিন আহমেদের।
ওই চক্রটি সুন্দরবনে দস্যুতাসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে।