প্রচ্ছদ / খবর / ‘রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বড় দুর্নীতি’

‘রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বড় দুর্নীতি’

Bagerhat-Pic-01(04-04-2016)TIBট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের উদাহরণ দেই। কিন্তু ভারতই বাংলাদেশের সাথে দুর্নীতি করছে। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বড় দুর্নীতি।’

‘যে প্রকল্প ভারত তার দেশে বনের ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে করতে পারেনি। তা তারা বাংলাদেশের সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে করছে। সুন্দরবনের কাছে কয়লা ভিত্তিক এই বিদ্যুৎ প্রকল্প মারাত্মক ক্ষতিকর। ভারত এই নরককে বাংলাদেশ সরকারের কিছু আমলা-মন্ত্রীদের কাছে স্বর্গ হিসাবে দেখাচ্ছে।’

সোমবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ‘স্থানীয় পর্যায়ে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক বাগেরহাটে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বাগেরহাট আয়োজিত সভায় প্রধান বক্তার বক্তৃতায় ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’র সংস্কৃতি দেশে দুর্নীতি প্রসারিত করছে। সব রাজনীতিবীদ দুর্নীতি সহায়ক পরিবেশের জন্য দায়ী না। রাজনীতিকে যারা ব্যবসা মনে করেন, যারা রাজনীতি থেকে মুনাফা নিতে চান-তারাই এখন রাজনীতির মাঠে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আছেন।

পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী রাজনীতিবীদ ছিলেন ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। নবম ও দশম জাতীয় সংসদে ব্যবসায়ী রাজনীতিবীদদের অবস্থান বেড়ে দাড়িয়েছে ৫৯ শতাংশ। এই অবস্থা প্রমাণ করে যে, রাজনীতিকে যারা ব্যবসা মনে করেন, রাজনীতি ক্রমেই তাদের হাতে চলে যাচ্ছে।’

দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানিয়ে টিআইবি প্রধান বলেন, ‘ গণতন্ত্রের একমাত্র বিকল্প আরও উন্নততর গণতন্ত্র, এর কোন বিকল্প নেই। আর উন্নততর গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান পূর্বশর্ত দুর্নীতি বিরোধী পরিবেশ সৃষ্টি করা।’

সরকারে থাকলে সম্পদ বাড়বে (!), এটা সাভাবিক – দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের এমন বক্তব্য খুবই নেতিবাচক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ মানুষ ‘সুযোগ পেলে’ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে চান। দেশের এই বৃহদাংশ মানুষকে সুযোগ করে দিতে হলে স্থানীয় পর্যায় থেকে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন শুরু করতে হবে।

সনাক বাগেরহাটের সভাপতি অ্যাড. রামকৃষ্ণ বসু সভাপতিত্বে শহরের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন বাগেরহাট সনকে’র শিক্ষা বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক সনাক সভাপতি অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব।

দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বিষয়ে আলোকপাত করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এখনও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। বরং দেশে দুর্নীতি বাড়ছে। তবে আশার কথা এই যে, দুর্নীতি দমনে চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের মত একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। দুর্নীতি দমনে অত্যন্ত সহায়ক ‘তথ্য অধিকার আইন’ প্রণয়ন করা গেছে। এমনকি বাংলাদেশ জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী সনদে স্বাক্ষরও করেছে।’

প্রশ্নোত্তর পর্বে বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ড. একে আজাদ ফিরোজ টিপু, বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. পারভীন আহমেদ, অধ্যাপক মো. মোজাফফর হোসেন, অধ্যাপক কমল কুমার ঘোষ, সাংস্কৃতিক কর্মী শেখ নজরুল ইসলামসহ বাগেরহাটের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণপত্র অনুযায়ী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. মীর শওকাত আলী বাদশা। প্রধান বক্তা ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ মো. মিজানুর রহমান খান এবং জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম। তবে তাদের কেউই অনুষ্ঠানে আসেননি।

মুক্ত আলোচনায় অতিথিরা অনুপস্থিতির বিষয়ে আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে অনুষ্ঠানের মূখ্য বক্তা, সনাক সদস্য অধ্যাপক চৌধুরী আব্দুর রব জানান, রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় অতিথিরা অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেননি।

অনুষ্ঠানে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক স্থানীয় পর্যায় থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে সামাজিক প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তুলতে আহ্বান জানান।

০৪ এপ্রিল :: স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আইএইচ/এনআরএ/বিআই

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ