বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা পরিদর্শনে এসেছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা-ইউনেস্কোর একটি প্রতিনিধি দল।
বুধবার (২৩ মার্চ) সুন্দরবনে আসা দলটি তিনদিন বন এবং বন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করবে।
সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সংগঠন বিরোধিতা শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের এ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেছে বলে জানা গেছে।
ইউনেস্কোর প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- ফ্রান্সের ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারাবিয়ান ইউনিটের প্রকল্প কর্মকর্তা ফ্যানি এডোলফিন এম ডোভের, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকৃতি সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ নওমি ক্লার, বিশ্ব ঐতিহ্যের পর্যবেক্ষণ কর্মকর্তা মিজুকি মুরাই।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র থেকে পাঠানো ‘রি-অ্যাকটিভ মনিটরিং মিশন’ নামের এই প্রতিনিধি দলটি ২৮ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। সুন্দরবন পরিদর্শন শেষে দলটি পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নৌ মন্ত্রণালয়সহ সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে।
প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বন্য প্রাণি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহিদুল কবির জানান, সকালে দলটি সুন্দরবনে পৌঁছেছে। আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত দলটি সুন্দরবন ও এর আশপাশের এলাকা পরিদর্শন করবে।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে ‘ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডে’র (এনটিপিসি) প্রকল্প এলাকা ছাড়াও সুন্দরবনের পাশে পশুর নদী, শ্যালা নদী, মংলা বন্দর, করমজল এমনকি যেসব এলাকায় তেলের ট্যাংকার, কয়লার কার্গো ডুবেছে সেসব এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করবেন। একই সঙ্গে এসব এলাকার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, গবেষক এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
সুন্দরবনের ১৪ কিলোমিটারের মধ্যে রামপালে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে -এমন দাবি করে দেশের তেল গ্যাস, খনিজ-সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংষ্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন এ প্রকল্প বন্ধে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে।
তবে সরকার প্রথম থেকেই বলছে, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না। আন্দোলনকারীদের ওই দাবি উপেক্ষা করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজও দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে সরকার।
ইউনেস্কোর ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব ড. মহিউদ্দিন জানান, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারী-কৈর্গদাসকাঠি মৌজায় এক হাজার ৭৩৪ একর জমির উপর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সংগঠন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা শুরু করে। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমেও প্রচার পায় এসব খবর। এর পরিপেক্ষিতে ইউনেস্কো বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন আসা ইউনেস্কোর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটি তিন দিন সুন্দরবনে থাকবে। দলের সদস্যরা এনটিপিসি নামে নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করবে। সুন্দরবন ঘুরে প্রতিনিধি দলটি তাদের পর্যবেক্ষন ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে জমা দেবে। তাদের এই পর্যবেক্ষণ আমাদের জন্য ‘খুবই স্পর্শকাতর’ বিষয়।
তিনি বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে ইউনেস্কোর দেওয়া শর্তাবলীর কোনো রকম ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয় তাহলে আমাদের জন্য অশনি সংকেত হবে। সরকার এই দলকে সার্বিক সহযোগিতা করছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনকে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’র তালিকাভুক্ত করে।
২০১৫ সালের মার্চ মাসে ইউনেস্কোর বার্ষিক সাধারণ সভায় সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, বনের ভেতর নৌ-চলাচল, আশপাশে শিল্প কারখানা ও শ্যালা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো হয়। পরিদর্শন শেষে এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দেবে প্রতিনিধি দলটি।