রাত পেরুলেই ‘সংঘাত-সহিংসতার’ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বাগেরহাটের নয় উপজেলার ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭৩টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলার ৭৩টি ইউনিয়নের কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপারসহ ভোটের সব সরঞ্জাম। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু করতে ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।
তবে এই নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বাগেরহাটের ৯টি উপজেলার ৭৩ ইউনিয়নের ৬৭৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৪৫৫টি ভোট কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯৬টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৬৯টি, কচুয়া উপজেলার ৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৭টি, চিতলমারী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫টি, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১৪৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৫টি, শরণখোলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৩৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ২৯টি, মংলা উপজেলার ৫৪টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৯টি, ফকিরহাট উপজেলার ৭২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১টি, রামপাল উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৬টি এবং মোল্লারহাট উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫৪টি ভোট কেন্দ্রের সবগুলোকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নে বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী আকতারুজ্জামান মন্টুকে তার মনোনয়নপত্র দাখিল করতে বাধা দেয়ার প্রমান পাওয়ায় নির্বাচন কমিশন তা স্থগিত করে এবং মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের মেয়াদ উত্তীর্ণ না হওয়ায় পরে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া ভোটের আগেই এজেলার ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলম বলেন, সোমবার সকালে জেলার ৭৩টি ইউনিয়নে নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌছে দেয়া হয়েছে। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সাড়ে চৌদ্দ হাজারে বেশি পুলিশ ও আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি র্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবি নিয়মিত টহল দেবে।
অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে জেলার চারজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নয়জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ৩৭ জন নির্বাহী হাকিমের নের্তৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান দিপু অভিযোগ করেন, নির্বাচনের আগেই চেয়ারম্যান পদে বাগেরহাটে ৭৩ ইউনিয়নের মধ্যে ৩৩টিতে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এসব ইউনিয়নে আমাদের দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে দিলেও জমা দিতে বাধা দিয়েছে সরকার দলীয় প্রার্থীরা।
বাকি যে ৪০টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসব ইউনিয়নের অধিকাংশতে আমাদের দলীয় প্রার্থীরা ঠিকমত নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেনি। অনেক ইউনিয়নের প্রার্থীদের বাড়ির সামনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের ক্যাডাররা পাহারায় রেখেছেন। আবার কোন কোন প্রার্থীকে এলাকাছাড়া করেছেন। প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে জানিনো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ইউনিয়নে ভোটারা ভোট দিতে আসতে পারা নিয়ে তিনি সংশয় প্রকাশ তিনি বলেন, এতো কিছুর পরও বিএনপি এখনো মাঠে আছে।
অবশ্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক বলেন, আমাদের কাছে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দুয়েকটি ইউনিয়নে ছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে কোন অভিযোগ করেনি। করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি জানান, ইউপি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্টু করতে সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জেলার ৭৩ ইউনিয়নের ৬৭৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. নিজামুল হক মোল্যা বলেন, বাগেরহাট জেলার নয়টি উপজেলায় মোট ৬৭৮টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ৪৫৫টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নত করে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও বিজিবি’র প্রায় পনেরো হাজার সদস্য মাঠে থাকবে। এছাড়া ২০টি চেকপোস্ট, ভ্রাম্যমাণ আদালতের ১৪৮টি দল এবং স্ট্রাইকিং রিজার্ভের ২৫টি দল সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকবে মাঠে।