সুন্দরবনে একের পর এক নৌ দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বনের শ্যালা নদী দিয়ে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এদিকে কয়লাবোঝাই উপকূলীয় জাহাজ (কোস্টার) ডুবির ঘটনায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে বন বিভাগ।
তবে কোস্টারডুবির পর ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি উদ্ধার কাজ। কবে নাগাদ শুরু করা যাবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এক হাজার ২৩৫ টন কয়লা নিয়ে যশোরের নওয়াপাড়ায় যাওয়ার পথে শনিবার (১৯ মার্চ) বিকালে এমভি সী হর্স-১ নামের নৌযানটির তলা ফেটে গেলে সেটি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শেলা নদীতে ডুবে যায়।
কোস্টার ডুবির পর রোববার (২০ মার্চ) রাতে জাহাজের মাস্টার সিরাজুল ইসলাম শরণখোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
আর সোমবার (২১ মার্চ) সকালে বাগেরহাটের শরণখোলা থানায় গিয়ে কোস্টারের মালিকের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ মামলা করেন চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) ফরেস্টার সুলতান মাহমুদ।
শরণখোলার ওসি মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, “বন বিভাগের এ মামলায় নৌযানটির মালিক ও মাস্টারসহ ছয় জনকে আসামি করা হয়েছে।”
আসামিরা হলেন- কোস্টার সী হর্স-১ এর মালিক মনিরা কবির, কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হালিশহরের সমতা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং এজেন্সির মালিক মো. আজিজুর রহমান, এজেন্সির ম্যানেজার জামাল হোসেন, জাহাজের মাস্টার মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, পাইলট মো. ইসমাইল ফরাজি, শুকানী মো. সাহিদুল ইসলাম।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বলেন, “কয়লাবাহী কোস্টারডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের জলজপ্রাণী, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলাটি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আশরাফ হোসেন জানান, নতুন করে দুর্ঘটনা এড়াতে সোমবার সকাল থেকে শ্যালা নদীতে সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শ্যালা নদীর হরিণটানার যে এলাকায় কোস্টার ডুবেছে, তার আশপাশে মার্কিং বয়া দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, পণ্যবাহী নৌযানগুলোকে আপাতত মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ঘটনা তদন্তে গঠিত বাগেরহাট জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের দুটি তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কয়লার কারণে দূষণ, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবেন দুই কমিটির সদস্যরা।
ডুবে যাওয়া কোস্টারটি উদ্ধারে কবে নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে জানতে চাইলে আশরাফ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে পানির গভীরতা ৩০ থেকে ৩২ ফুট। সাড়ে সাতশ মেট্রিক টন ওজনের সী হর্সে কয়লা রয়েছে ১ হাজার ২শ’ ৩৫ মেট্রিক টন।
“খুলনা ও বরিশালে আমাদের যে উদ্ধার যান রয়েছে তার উত্তোলন ক্ষমতা মাত্র আড়াইশ মেট্রিক টন। সুতরাং কোস্টারটি উদ্ধার করতে সময় লাগবে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কোস্টারের মালিক পক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে।”
২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এই শেলা নদীতে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি ওয়েল ট্যাঙ্কার ডুবে যায়। ওই সময় থেকে সুন্দরবনের এই নৌপথটিতে যান চলাচল বন্ধ করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন দাবি জানিয়ে আসছে।
- সুন্দরবনে কয়লা বোঝাই কোস্টার ডুবি
- সুন্দরবনে কয়লাবাহী কোস্টারডুবি: তদন্তে দুই কমিটি