বাগেরহাট জেলা জজশীপের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ৫টি পদে অন্তত ৭ জনকে বিধি অনুসরণ না করেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচ জনের নিয়োগ আদেশের উপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে বাগেরহাট আদালত পাড়ায়।
রীট পিটিশনে বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ মিজানুর রহমান খান, জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ও বাগেরহাটের মূখ্য বিচারিক হাকিম মো. জিয়া হায়দারসহ মোট দশ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিবাদী করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ মিজানুর রহমান খান এবং এই জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বাছাই কমিটির চেয়ারম্যান ও বাগেরহাটের মূখ্য বিচারিক হাকিম মো. জিয়া হায়দারের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
পরে বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ এর কার্যালয় থেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, যথাযথ বিধি অনুসরণ করে যোগ্য প্রার্থীদেরই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বুধবার বিকাল পর্যন্ত এই নিয়োগ সংশ্লিষ্ট উচ্চ আদালতের কোন স্থগিতাদেশ তাদের কার্যালয়ে এসে পৌছায়নি।
এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংক্ষুব্ধ চারজন নিয়োগ প্রার্থীর দায়ের করা রীট পিটিশনের ভিত্তিতে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মঙ্গলবার ১ মার্চ এই আদেশ দেন। ঐ দিনই এই পাঁচ জনসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর ১৩ জন কর্মচারী বাগেরহাট জেলা জজশীপে নিয়োগ পান। এই মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী এম. মিজানুর রহমান বুধবার দুপুরে এই সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
বাগেরহাট জজশীপের সংশ্লিষ্ট সূত্র ও এই নিয়েগ বিষয়ক বিভিন্ন কাগজপত্র থেকে জানা যায়, বাগেরহাটের মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের আটটি পদের ১৩টি শূণ্য পদে নিয়োগের জন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারী লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারী লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারী উর্ত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ মিজানুর রহমান খান গত ১৮ ফেব্রুয়ারী ঐ আটটি পদে চূড়ান্ত নির্বাচিত ১৩ জনকে ১ মার্চ সংশ্লিষ্ট আদালতে যোগদানের আদেশসহ নিয়োগপত্র প্রদান করেন। তারা সবাই গত ১ মার্চ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করেছেন।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বেঞ্চ সহকারীর দুটি পদে মানিকগঞ্জ ও ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার দু’জন প্রার্থী, রেকর্ড সহকারীর একটি পদে মানিকগঞ্জ জেলার একজন, একটি ক্যাশিয়ার ও একটি প্রসেস সার্ভেয়ার পদে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার দুইজন, এবং অফিস সহায়কের (এমএলএসএস) তিনটি পদে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, খুলনা ও বাগেররহাট জেলার একজন করে প্রার্থী নিয়োগ পেয়েছেন। অন্য পদগুলোতে বাগেরহাট জেলার প্রার্থীরা নিয়োগ পেয়েছেন।
১৩টি পদের মধ্যে ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও মানিকগঞ্জ জেলার প্রার্থীদের প্রাধান্য থাকায় বিষয়টি নিয়ে বাগেরহাট জজশীপের কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের গুঞ্জন উঠেছে। তবে এ বিষয়ে কেউই প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।
মামলার আইনজীবী এম. মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে ফোনে বলেন, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী এই নিয়োগে স্থানীয়দের জন্য শতকরা ত্রিশভাগ কোটা সংরক্ষণ করার কথা। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেও এ বিষয়ে উল্লেখ ছিলো। প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় প্রতিটি পদের বিপরিতে একাধিক স্থানীয় প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা অনুযায়ী স্থানীয়দের জন্য যথাযথভাবে কোটা সংরক্ষিত হয়নি।
২০১৫ সালের ৭ জুন সরবরাহ করা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৮ নং সার্কুলারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঐ বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ও মহানগর দায়রা জজ আদালত ও মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালতসহ কিছু আদালতের ক্ষেত্রে স্থানীয় ও স্থায়ী বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের জন্য উপযুক্ত ব্যাখ্যাসহ নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এই নিয়োগে তা অনুসরণ করা হয়নি বলেও উচ্চ আদালতের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তার সংক্ষুব্ধ মক্কেলরা বেঞ্চ সহকারী ও এমএলএসএস পদে নিয়োগপ্রাপ্ত পাঁচ জনের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ চেয়ে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। অন্য পদগুলোর ক্ষেত্রে যথখাযথভাবে বিধি অনুসরণ করা না হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট সংক্ষুব্ধরাও আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।