‘উপকূলীয় এলাকার প্রায় চার কোটি মানুষের ক্ষতি করে রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুন্দরবন ধ্বংসকারী বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি আয়োজিত এক পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।
‘বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনেক বিকল্প আছে, কিন্তু সুন্দরবনের কোন বিকল্প নাই’ উল্লেখ করে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে নষ্ট হবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। সরকার বলছে- বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে এখানে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু আসলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে এই এলাকার ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ক্ষতি হবে।
তাই দেশ ও জনগণের কথা চিন্তা করে সরকারের এ প্রকল্প বাতিল করা উচিত।
বাগেরহাটে পথসভা শেষে জেলার খুলনা-মংলা মহাসড়কের কাটাখালী মোড়ে সমাপনী সমাবেশ ও জনযাত্রার ঘোষণা পাঠের মধ্য দিয়ে জাতীয় কমিটির চার দিনের এ কর্মসূচি শেষ হবে।
সুন্দরবন ধ্বংসী রামপাল-ওরিয়ন বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ সকল অপতৎপরতা বন্ধ ও বিদ্যুৎ সংকটের সমাধানে সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে বৃহস্পতিবার (০৯ মার্চ) সুন্দরবন অভিমুখী ‘জনযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
এর আগে রোববার (১৩ মার্চ) বেলা পৌনে ১২টার দিকে জনযাত্রাটি সড়কপথে খুলনা থেকে বাগেরহাট শহরে পৌঁছে। সেখানা জেলা কমিটির নেতারা তাদের স্বাগত জানান।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস, গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জাতীয় কমিটির সদস্য ও সিপিবি-বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জেলা কমিটির আহ্বায়ক রনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও সদস্য সচিব ফররুখ হাসান জুয়েল বক্তব্য রাখেন।
জনযাত্রা দলটি সুন্দরবন অভিমূখে যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনার বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও সমাবেশ করে।
তেলগ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটিসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতা করে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। তারা বলছে এখানে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
তবে সরকার শুরু থেকেই বলছে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ দূষণ ও প্রতিবেশ যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সর্তক থেকেই এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকার বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারী-কৈর্গদাসকাঠি মৌজায় এক হাজার ৭৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ২০১১ সালে সমঝোতা স্মারকের পর ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে। কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।
এ কেন্দ্রের নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড যার সমান অংশীদার থাকবে দুই দেশ।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে একই দাবিতে সুন্দরবন অভিমুখে লংমার্চ করেছিল তেলগ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি।