বাগেরহাট পৌর এলাকার কমবেশি পাঁচ বর্গকিলোমিটার সীমানা পার হলে চারদিকেই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এলাকা। প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে, প্রতীক বরাদ্দও সম্পন্ন। কিন্তু উৎসবমুখর পরিবেশ চোখে পড়ল না কোথাও।
তবে ভোটারদের কেউ কেউ বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে কিছুটা চোখে পড়তে পারে ভোটের আমেজ।
কচুয়ার বাঁধাল বাজারের জাকির হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘আগে তো একটু কোলাকুলি করে ভোট চাইত প্রার্থীরা। এবার সেই সুযোগ থেকেও আমরা বঞ্চিত। চেয়ারম্যান হয়ে এলাকার কাজ না করলেও কিছু বলা যাবে না। তখন বলবে যে তোমাদের ভোট তো আমাদের লাগেনি।’
সদর, কচুয়া ও মোরেলগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়ন ঘুরে ভোটারদের এমন মনোভাব পাওয়া যায় যে ফলাফল কী হবে, তা তাঁরা সবাই জানেন। বাকি শুধু গেজেট প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা। অনেকে এমনও বলেছেন, এই নির্বাচন টাকা খরচ ছাড়া আর কিছু নয়।
বাগেরহাটের নয়টি উপজেলায় ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রথম দফায় ভোট হচ্ছে ৭৪টিতে। ২২ মার্চের এই ভোটে এর মধ্যে ৩৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ফলে সেগুলোতে চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে না। বাকি ৪০টিতে সব পদেই ভোট হবে।
বাগেরহাট শহর থেকে দড়াটানা সেতু হয়ে দক্ষিণের দিকে এগোতেই সদর উপজেলার বেমর্তা ইউনিয়ন। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী একজনই, আওয়ামী লীগের মনোয়ার হোসেন। ফলে ভোটের আগেই যেন ভোট শেষ। স্থানীয় ষাটোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার চেয়ারম্যান আর আমাদের দাম দেবে না। কারণ পদ পেতে আমাদের ভোট লাগেনি তার। এমন ভোট তো জীবনে দেখিনি।’
বেমর্তা ছেড়ে কিছু দূর এগোলে কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়ন। এখানে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী দুজন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম। আর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি বা অন্য কোনো দলের নয়, নিজেরই সন্তান মেহেদী হাসান।
এই ইউনিয়নে দীর্ঘদিন চেয়ারম্যান ছিলেন এস এম মাহফুজুর রহমান। ২০০৯ সাল থেকে তিনি কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আর তাঁর ছেড়ে যাওয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান হন স্ত্রী তাসলিমা। বাবার সঙ্গে ছেলের এক দশকের দ্বন্দ্ব। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাবার রাজনৈতিক বিরোধীরা সমর্থন দিচ্ছেন ছেলেকে।
গ্রামের খেটে খাওয়া হাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে ততটা মাথাব্যথা নেই। মা-ছেলে প্রতিপক্ষ বলে কিছুটা কৌতূহল আছে। তবে ভোটে ছেলের চেয়ে মা এগিয়ে।
রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডে সর্বশেষ নির্বাচনে সদস্য (মেম্বার) নির্বাচিত হয়েছিলেন সরদার শাহনেওয়াজ। রাজনৈতিক পরিচয় দিতে আগ্রহী নন তিনি। বললেন, ‘আমি জনগণের উন্নয়ন করতে পারি নাই। তাই এবার প্রার্থী হইনি।’
ইউপি নির্বাচন সম্পর্কে শাহনেওয়াজ বলেন, ‘আগে শুনতাম ভোট আসলে পান-সুপারি, চা-বিস্কুটের দাম বেড়ে যায়। এবার আর ভোটারেরও কদর নাই, এসব জিনিসেরও দাম বাড়েনি।’
রাঢ়ীপাড়া থেকে পিরোজপুরের সড়ক ধরে কিছু দূর এগোলে বাঁধাল বাজার। বৃহস্পতিবার হাটবার হওয়ায় মানুষে গিজ গিজ করছিল। বাজারটি পড়েছে কচুয়ার বাধাল ইউনিয়নে। কয়েকটি দোকানে বসে ভোট নিয়ে আলোচনা কানে এল না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানদার বললেন, যিনি বাধাল ইউনিয়নের বাসিন্দা, ‘এখন আর চায়ের কাপে ঝড় তোলার দিন নাই। বিএনপির এক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়ে প্রত্যাহার করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাসান ফয়সাল আহমেদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তিনি এখন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।’
বাঁধাল থেকে ফিরতি পথে সাইনবোর্ড হয়ে শরণখোলা রোড ধরে এগোলে পড়ে মোরেলগঞ্জের দৈবজ্ঞহাটী বাজার। শতবর্ষী এই বাজারটা পড়েছে দৈবজ্ঞহাটী ইউনিয়নে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ফকির। একসময় তিনি যুবদলের নেতা ছিলেন। ফলে আওয়ামী লীগেরই আরেকটি অংশ তাঁর বিরোধী।
দৈবজ্ঞহাটী বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, ভোটার উপস্থিতি খুব একটা না-ও হতে পারে। কারণ ভোট দেওয়া মানে সময় নষ্ট। সরকারদলীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা হবে।