বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার স্থানীয় একটি স্কুলের চার ছাত্রী একসঙ্গে বিষপানে ‘আত্মহত্যার’ চেষ্টা করেছে।
এরা হলেন- উপজেলার রায়গ্রামের শেখর মৃধার মেয়ে মনিষা মৃধা (১৩), নৃপেন মৃধার মেয়ে অর্পিতা মৃধা (১৩), শংকর মৃধার মেয়ে সেতু মৃধা (১৪) ও শম্ভুনাথ মৃধার মেয়ে সুমি মৃধা (১৪)।
এই চারজনই চিতলমারী সদর ইউনিয়নের রায়গ্রাম নবপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।
স্কুলের একটি ঘটনায় প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের নিয়ে দেখা করতে বলায় ‘ভয়ে’ তারা এ পথ বেছে নিতে থাকতে পারে- বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মামুন হাসান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শুক্রবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওই চার ছাত্রীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর চার ছাত্রীই আশঙ্কামুক্ত জানিয়ে তিনি বলেন, “এই শিক্ষার্থীরা রিপকড নামের এক ধরনের কীটনাশক পান করেছে। এদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে, বর্তমানে সবাই আশঙ্কামুক্ত।”
এদিকে খবর পেয়ে রাতে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফরিদ হোসেন ও থানার ওসি মো. রেজাউল করিম হাসপাতালে গিয়ে ওই ছাত্রীদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন।
পরে ইউএনও স্কুলের শিশুরা কেন বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করলো তা তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা মফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।
ইউএনও ফরিদ হোসেন বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই চার শিক্ষার্থী ‘রিপকড’ নামে এক ধরনের কীটনাশক সংগ্রহ করে বাড়ির পাশে একটি বাগানে গিয়ে তা পান করে। এরপর তারা বমি করতে শুরু করলে স্থানীয়রা ঠিক পেয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এই চার কিশোরীকে চিকিৎসা দেওয়ার পর বর্তমানে সুস্থ্য থাকলেও তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানান প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।
নবপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিবব্রত মজুমদারের বরাত দিয়ে ইউএনও আরও বলেন, “বেশ কিছুদিন ধরে ওই স্কুলের দশম শ্রেণির কয়েকজন উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী এই চার ছাত্রীকে কোমল পানীয়সহ বিভিন্ন খাবার খেতে দিতে শুরু করে। এই খাবার খেয়ে মেয়েরা বমি করে।”
“চার থেকে পাঁচ দিন আগে প্রধান শিক্ষক নিজে তা দেখতে পান। পরে তিনি ওই চার মেয়েকে ডেকে ওদের দেওয়া খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দেন এবং আগামী শনিবার (৫ মার্চ) তাদের অবিভাবকদের স্কুলে নিয়ে আসার জন্য বলেন।”
অবিভাবকদের স্কুলে নিয়ে আসতে বলায় এই চার ছাত্রী বিষপান করে থাকতে পারে – প্রাথমিক ভাবে এমন ধারণার কথা জানান চিতলমারী থানার ওসি মো. রেজাউল করিম
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ইউএনও ফরিদ হোসেন বলেন, আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে পরবরর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে প্রায় একই সময়ে রাত পৌনে ৮টায় চিতলমারী উপজেলার সাবোখালী গ্রামের সুব্রত মন্ডলের স্ত্রী সাগরিকা মন্ডল (১৮) নামে এক গৃহবধূ বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাকেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।