সরকার দলীয় প্রার্থীদের ভয়ভীতি ও বাধায় বাগেরহাটের ৭৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ২১টিতে চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ আছে ৭৫টি। ঘষিত তফসিল অনুয়ায়ী এর মধ্যে ৭৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে (প্রথম ধাপে) ২২ মার্চ। এসব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিলো সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি)।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু সোমবার রাতে অভিযোগ করেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলার সবগুলো ইউনিয়নে প্রার্থী দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের ভয়ভীতি ও বাধার মূখে বিভিন্ন স্থানে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যেতে পারে নি।
ভয়ভীতি ও বাঁধা প্রদানের কারনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি – বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে সারাফাত হোসেন বাবলু, ডেমা ইউনিয়নে আবু বক্কর, গোটাপাড়া ইউনিয়নে বাশারাত হাওলাদার, যাত্রাপুর ইউনিয়নে শেখ নুর মোহম্মদ, বেমরতা ইউনিয়নে তৌহিদুল ইসলাম।
কচুয়া উপজেলার গজালিয়া ইউনিয়নে আজাহার আলী, রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নে সরদার রেজাউল হোসেন, কচুয়া সদর ইউনিয়নে শেখ আবু সাঈদ।
ফকিরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নে মোফাজ্জল হায়দার ও মূলঘর ইউনিয়নে শেখ আকতারুজ্জামান মন্টু।
চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নে মনির হোসেন, শিবপুর ইউনিয়নে নওয়াব আলী, হিজলা ইউনিয়নে ইউসুফ আলী শেখ, চরবানিয়ারী ইউনিয়নে আবুল কালাম বাদল, সদর ইউনিয়নে আনিছুর রহমান মোল্লা।
মোল্লাহাট উপজেলায় আটজুড়ি ইউনিয়নে মো. আমানউল্লাহ, কুলিয়া ইউনিয়নে মোল্লা তরিকুল ইসলাম, কোদালিয়া ইউনিয়নে বায়েজিদ মোল্লা, চুনখোলা ইউনিয়নে কাবুল চৌধুরী।
মংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে মোশারেফ হোসেন ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ ইউনিয়নে শেখ হুমায়ুন কবির।
অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে জেলার নয়টি উপজেলার ৭৪ ইউনিয়নেই বিএনপি দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত করে। আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের হুমকি ও বাঁধায় তারা মনোনয়ন জমা দিতে পারে নি।
রির্টানীং কর্মকতার কার্যালয়ে সামনে বিএনপি প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মারধর ও নাজেহাল করার অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, সরকার দলীয় ক্যাডাররা বেশকিছু প্রার্থীর মনোনয়নপত্র কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলে, কাউকে ভয়ভীতি দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছে। যার কারনে জেলার অন্তত ২১ টি ইউনিয়নে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেনি।
এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট রির্টানীং কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেও কোন সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তার।
জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালামের অভিযোগ, জনগনের উপর আস্থা না থাকায় আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় প্রার্থীদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হতে এসব করছে।
তবে এবিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএনপির করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের দলের বিরুদ্ধে তাদরে অভিযোগ ভিত্তিহীন।
বিএনপি নিজেরা ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন মল্লিক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে বাগেরহাট জেলার ৭৪টি ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণভাবে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা বাধারমূখে মনোনয়ন দাখিল করতে পারেনি – কোন প্রার্থীদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মো. নিজামুল হক মোল্যা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলে বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা বাঁধা পেয়েছেন এমন অভিযোগ আমার কাছে কেউ করেনি। অভিযোগ করলে সেসব প্রার্থীদের পুলিশী নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হতো।