সোমবার শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার প্রথম দিনে ভূল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার এক পরীক্ষার্থী আত্মহত্যা চেষ্টা করে।
বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় দু’বছর আগের (২০১৪ সালের) প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে সোয়ান হাওলাদার (১৫) নামে ওই শিক্ষার্থী।
জেলার কচুয়া উপজেলার সিএস পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ার এই ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভুলের ঐ কেন্দ্রের ১৭ নং কক্ষে চারটি বিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষার্থী এ ধরনের ভূলের শিকার হয়েছেন।
ভুক্তভোগী এই বারো শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিসি ভাসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চার জন, আন্ধারমানিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’জন, গোয়ালমাঠ রসিকলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’জন এবং জোবাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’জন পরীক্ষার্থী।
এদিকে একই ধরনের ভুলে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন জেলার ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এবং বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি কেন্দ্রের আওতাধীন বেতাগা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৫৫ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী।
কচুয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা করা সোয়ান হাওলাদার কচুয়া উপজেলার বিসি ভাসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বগা গ্রামে রুহুল আমিন হাওলাদারের ছেলে। ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হবার আশংকায় সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কীটনাশক পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই শিক্ষার্থী। ঘটনার পরপর তাকে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কিছুটা সুস্থ হলে হাসপাতাল থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্তকর্তা তাপস কুমার দাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, ‘সোয়ান হাওলাদার কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে পান করেছিলো। তবে তার অবস্থা এখন আশংকামুক্ত। তবে সে শারিরীকভাবে কিছুটা দুর্বল ছিলো। পরবর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সুবিধার্থে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’
বিসি ভাসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সচীন্দ্রনাথ পাইক বাংলানিউজকে বলেন, তিনি পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে অস্বাভাবিক প্রশ্ন হয়েছে জানিয়ে বলে যে, এ বিষয়ে তারা কক্ষে দায়িত্বপালনকারী শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু শিক্ষকরা তাদের উত্তর লিখতে বলেন এবং প্রশ্নপত্র দেখার অধিকার নেই বলে জানান।
তখন তিনি প্রশ্ন খুলে দেখেন যে পরীক্ষার্থীদের ২০১৪ সালের প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়েছে। পরে তিনি কেন্দ্র সচিবসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিষয়টি অবহিত করান।
ঐ কেন্দ্রের অন্যতম হল সুপার ও স্থানীয় শহীদ আসাদ স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুধাংশু কুমার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরীক্ষা শেষ হবার পর বিষয়টি জানা যায়। এ বিষয়ে যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।
পূর্বের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে কচুয়া উপজেলা মোবায়দুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দু’জন পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে একই ধরণের ভুল হয়েছিলো। কিন্তু তাদের ফলাফলে কোন সমস্যা হয়নি।
চুলকাঠি কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব সুশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, বেতাগা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এক পরীক্ষার্থীর সাথে এ ধরণের প্রশ্নপত্র ভুলের ঘটনা হয়েছে। তবে পাঁচ মিনিট পর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তাকে বাড়তি সময়সহ সঠিক প্রশ্নপত্র প্রদান করা হয়েছে।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, মূলঘর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু শিক্ষার্থীর হাতে ভুল প্রশ্ন গিয়েছিলো এবং দায়িত্বশীলদের নজরে আসার পর তা দ্রুত পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্র সুপারের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে বিষয়ে জানতে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাংগীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কচুয়া সিএস পাইলট বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঘটনা সম্পর্কে আমি অবহিত। তবে অন্য দুটি ঘটনা আমার জানা নেই।
কচুয়ার সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের কেন্দ্র প্রধানসহ এই ঘটনার জন্য দায়ীদের দায়িত্ব থেকে অব্যহতি প্রদান ও কারণ দর্শানোর চিঠি দিতে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঐ শিক্ষার্থীরা যাতে ভোগান্তির শিকার না হন সে জন্য আমরা যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়বে না মর্মে তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’
সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সুপার ও প্রধানকে অব্যহতি বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কথা বলতে ইউএনও কাজী মাহাবুবুর রশীদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।