সুন্দরবনে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের যৌথ অভিযানের সময় বনদস্যুদের সঙ্গে ‘কথিত’ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গুলিবিদ্ধ ‘নয়ন বাহিনী’র প্রধন ছগির ভান্ডারি (৩৫) নিহত হয়েছেন।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাগেরহাট জেলার অন্তরগত সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের পানিরঘাট এলাকায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৬ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যৌথ বাহিনীর সঙ্গে বনদস্যু ‘নয়ন বাহিনী’র বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে বলে র্যাব জানায়।
বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দেশী-বিদেশী পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র, সাত রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় ‘নয়ন বাহিনী’র প্রধান ছগির ভান্ডারিকে।
র্যাব নিহত সগিরের পরিচয় নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তিনি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ গ্রামের আনোয়ার হোসেন ভান্ডারির ছেলে এবং র্যাবের তালিকাভুক্ত বনদস্যু। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সুন্দরবনের কথিত বনদস্যু তসলিম বাহিনী, রেজাউল বাহিনী, জুলফিকার বাহিনীসহ বিভিন্ন দস্যুদলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে দস্যুতা করে আসছিলেন।
ঐ সব বাহিনী প্রধানরা বিভিন্ন সময়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেলে গত কয়েক বছর ধরে ছগির পনের-কুড়ি জন দস্যু নিয়ে নয়ন বাহিনী নামে একটি দস্যুদল গঠণ করেন। তার এই দলটি পূর্ব সুন্দরবনে মৎস্যজীবী ও বনজীবীদের কাছ থেকে চাঁদা ও মুক্তিপণ আদায় করতেন। সগিরের বিরুদ্ধে বাগেরহাট ও খুলনার বিভিন্ন থানায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জরুরী চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সহাদেব অধিকারী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, বুধবার সকাল ১০টার দিকে র্যাব সদস্যরা মৃত অবস্থায় সগির নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। তার বুকের মাঝামাঝি অংশে দু’টি গুলি বিদ্ধ হয়েছিল।
র্যাব-৬ এর জেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকালে র্যাব-৬ ও গোয়েন্দা পুলিশের একটি যৌথ দল সুন্দরবনের ওই এলকায় অভিযান শুরু করে। সাড়ে ৭টার দিকে শরণখোলা রেঞ্জের পানিরঘাট এলাকায় পৌঁছালে দস্যুরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এসময় আত্মরক্ষায় তারাও পাল্টাগুলি ছোড়ে।
উভয় পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলে গোলাগুলি। এক পর্যায়ে দস্যুরা পিছু হটে বনের ভেতর পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে ৫টি দেশি বন্দুক, ৭ রাউন্ড গুলিসহ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দস্যু ছগির ভান্ডারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ট্রলার যোগে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে।
উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি বিদেশী একনলা বন্দুক, একটি বিদেশী এয়ার পিস্তল, তিনটি দেশী বন্দুক (এলজি) ও ৭ রাউন্ড বন্দুকের তাজা গুলি।
শরণখোলা থানার ওসি মো. শাহ আলম ফরাজী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, ময়না তদন্তের জন্য মৃতদেহ বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শরণখোলা থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিলো।