সামাজিক ও পারিবারিক বাঁধা, পারিপার্শ্বিকতাসহ নানা কারণে এখনও বৈষম্যের শিকার নারীরা। এরই মাঝে বাগেরহাট পৌরসভার দু’টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন দু’জন নারী।
বাগেরহাট পৌরসভার ৫৭ বছরের ইতিহাসে যা এবারই প্রথম।
এর মধ্য দিয়ে ১৯৫৮ সালের পহেলা এপ্রিল প্রতিষ্ঠার পর দেশের প্রাচীনতম এই পৌরসভার ইতিহাসে প্রথম বার পুরুষ প্রার্থীদের সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছে দু’জন নারী। যাকে ব্যাতিক্রমী ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বাগেরহাট পৌরবাসী।
সাহসী এই দুই নারী প্রার্থী হলেন- পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে হাসিনা রহমান (৪৫) এবং ৮নং ওয়ার্ডে নার্গিস আক্তার ইভা (৩৬)। এর আগে ২০১১ সালের নির্বাচনের সময় বাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসাবে দু’জনই প্রার্থী হয়েছিলেন।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুয়ায়ী, হাসিনা রহমান (নির্বাচনি প্রতীক-পাঞ্জাবী) ও নার্গিস আক্তার ইভা (নির্বাচনি প্রতীক-টেবিল ল্যাম্প) বাগেরহাট পৌরসভার ইতিহাসে সাধারণ কাউন্সিলর বা কমিশনার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রথম নারী প্রার্থী।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বাগেরহাট শাখার লিগাল এইড সদস্য ফতেমা আহমেদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘এটি আমাদের সবার জন্য অতন্ত আনন্দের। এই অগ্রযাত্রা কম নয়। বাগেরহাট থেকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নারীরা প্রার্থী হবেন ক’বছর আগেও কেউ ভাবেন নি। নারীরা এখন সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। এই দুই সাহসী নারীর জন্য আমার শুভ কামনা থাকবে।’
বাগেরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিক্ষক ও সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক কমল কুমার ঘোষ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘এক সময়তো এমনটি ভাবাই যায়নি। আমার জানা মতে পৌরসভা হওয়ার পর বাগেরহাটে তারাই প্রথম নারী, যারা-সাধারণ কাউন্সিলর পদে পুরুষ প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।’
বাগেরহাটের ইতিহাসে তারা নতুন এক অধ্যায়ের রচনা করলেন বলেও মন্তব্য করেন আমার বন্ধু রাশেদসহ বিভিন্ন চলচিত্রে অভিনয় করা শক্তিশালী এই অভিনেতা।
হাসিনা রহমান
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে হাসিনা রহমান পাঞ্জাবী প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান কাউন্সিলরসহ ৩ জন পুরুষ প্রার্থীর সাথে।
বাগেরহাট পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা হাসিনা রহমান রাজনীতির মাঠের বাইরেও মহিলা পরিষদ, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থা, রেড ক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। ব্যক্তিগত জীবনে একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকুরীও করছে তিনি।
সংরক্ষিত ১নং ওয়ার্ড (১, ২, ৩ নং ওয়ার্ডে) থেকে কাউন্সিলর পদে ২০১১ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হলেও এবার জায়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদি তিনি।
হাসিনা রহমান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘আমাদের ১নং ওয়ার্ড পৌরসভার উত্তর প্রান্তে। এখানে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। আমার জন্মস্থান এবং শ্বশুরবাড়ি এই এলাকায়। আমি নির্বাচিত হতে পারলে মাদক, সন্ত্রাসের মতোন এলাকার সমস্যা সামাধানের সাথে সাথে পানি বা বিদ্যুতের মত নাগরিক সুবিধাগুলো আরও বেশী করে নিশ্চিত করতে কাজ করব।’
আগের নির্বাচনে মুনিগঞ্জ (১নং ওয়ার্ড) কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর তুলনায় অনেক বেশী ভোট পেয়েছিলেন জানিয়ে কোন প্রার্থীর নাম না নিয়ে হাসিনা বেগম অভিযোগ করেন, একজন প্রার্থী দলবল নিয়ে তার কর্মী ও ভোটারদের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি করছেন।
প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এই এলাকার অনেক ভোটার ৩০ তারিখ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্ছিত হতে পারেন বলেও নিজের আশংকার কথা জানান তিনি।
নার্গিস আক্তার ইভা
৮নং ওয়ার্ডে টেবিল ল্যাম্প প্রতীক নিয়ে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নার্গিস আক্তার ইভার প্রতিদ্বন্দ্বি ৬ জন পুরুষ প্রার্থী।
বাগেরহাট পৌর মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইভা বরাবরই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। রেড ক্রিসেন্ট, মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও তার বিচরণ।
ব্যক্তি জীবনে এক শিশু কন্যার জননী নার্গিস আক্তার ইভা ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত বাগেহরাট পৌরসভা নির্বাচনে সংরক্ষিত ৩ নং ওয়ার্ড (৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড) থেকে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করেন ইভা। তবে তখন বিজয়ী হতে পানেনি তিনি।
বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে তিনি বলেন, আমারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলি কিন্তু আসলে কী সমান অধিকার ? প্রার্থীদের প্রতিকের বেলায়ও দেখেন নির্বাচন কমিশন সংলক্ষিত নারী প্রার্থীদের কোন ধরনের অবমানা ও বৈশম্যমূলক প্রতীক দিয়েছে। এলাকার নারীদের অসংখ্য সমস্যা। কিন্তু তারা পুরুষ কমিশনারদের কাছে তাদের সমস্যা জানাতে পারেন না।
‘সংরক্ষিত আসানের নারী কাউন্সিলরদের কাজের ক্ষেত্র ও ক্ষমতা অনেক কম। এসব বিষয় আমাকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী করেছে।’
বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা তার এলাকার বড় সমস্যা উল্লেখ করে ইভা বলেন, ‘আমার পারিবারিক পিছুটান কম। মানুষের মাঝেই আমার সময় কাটে। নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার পানি সমস্যা সমাধানে সর্বচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করব।’ এজন্য জলাসয় সংরক্ষনসহ কিছু পরিকল্পনাও আছে তার।
এলাকার নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে তার এখনও কোন সমস্যা হচ্ছে না জানিয়ে ইভা বলেন, এখানে তিনিসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী পরিবেশ শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক থাকলে এলাকাবাসী সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাকেই নির্বাচিত করবেন।
বাগেরহাট পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ৩২ জন। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে পৌরসভার ৩৪ হাজার ২০৩ জন ভোটার তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোট দিবেন। এরই মধ্যে প্রর্থীরা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি প্রচারনায় জমিয়ে তুলেছেন ভোটের মাঠ।