কাজ অসমাপ্ত রেখে বিল তুলতে গিয়ে সহযোগিতা না পাওয়ায় বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতার হাতে এক প্রকৌশলী শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম বাদী হয়ে শরণখোলা থানায় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞত ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে শরণখোলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) উপজেলা কার্যালয়ে এসে প্রকৌশলী রুহুল ইসলামকে মারধর করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তফা হাসানকে পৃথক ঘটনায় লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাওয়া হলে ওই দুই কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তবে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।
মামলার বাদী এলজিইডির শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম বাগেহরাট ইনফো ডটকমকে অভিযোগ করে বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দুই লাখ টাকায় শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের একটি মাটির রাস্তার আড়াইশ’ মিটার ইটের সলিং বসাতে শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজকে কাজ দেয়া হয়। তিনি এই কাজের মাত্র এক-চতুর্থাংশ শেষ করে বেশ কিছুদিন ধরে পুরো বিলটি তুলে নিতে আমাকে চাপ দিতে থাকেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরো ২-৩ জন অচেনা লোক নিয়ে আমার কার্যালয়ে ঢুকে আবারো বিলটি ছেড়ে দিতে চাপ দেন। কিন্তু আমি তাতে আপত্তি করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। এ সময় আমার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দৌড়ে এসে আমাকে তার হাত থেকে রক্ষা করেন। আমি এই বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এরপর থেকে আমি নিরাপত্তাহীনতায় আছি।
তবে ওই প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা শরণখোলা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, গত অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে শরণখোলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার কাজ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা ওই সব কাজ শেষ করে স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয়ে বিল জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম কয়েকজন ঠিকাদারের ২০-২৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তহবিল থাকা সত্ত্বেও অন্য ঠিকাদারদের বকেয়া বিলের চেক দিচ্ছেন না।
“ওই ঠিকাদারদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমি তার কাছে বিষয়টি জানতে গেলে দু’জনের মধ্যে উচ্চস্বরে কথা কাটাকাটি হয়েছে। মারামারির কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।”
ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পারসেনটেন্স (ঘুষ) নিয়ে বিল ছাড় কারার পাল্টা অভিযোগ করেন হাসানুজ্জামান পারভেজ।
তবে ঘুষের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট যে ঠিকাদাররা পুরো কাজ সম্পন্ন করেছেন তাদের বিল ছেড়ে দেয়া হয়েছে। যারা এখনো কাজ শেষ করতে পারেননি তাদের বিল আটকে আছে।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। সব কিছুই আইনানুগভাবে দেখা হবে। ঘটনা সম্পর্কে জানার পর শুক্রবার বাগেরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে মামলা দায়ের করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
শরণখোলা থানার ওসি মো. শাহ আলম মিয়া বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, এ ঘটনায় এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত করে এ বিষয়ে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।