মুঠোফোনে পরিচয়, অতঃপর প্রেম এবং বিয়ে। তবে বিয়ের চার মাস পার না হতেই প্রেমিক স্বামীর দেয়া আগুনে নিভে গেছে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কলেজ পড়ুয়া সোনিয়া আক্তারের (২০) প্রাণ প্রদীপ।
৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যু হয় মেয়েটির।
নিহত সোনিয়া আক্তার বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মোজাহার শিরকদারের মেয়ে। তিনি শহীদ শেখ আবু নাসের মহিলা ডিগ্রি কলেজের বি.বি.এস ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত ছিলেন।
মৃত্যুর আগে কচুয়া থানা পুলিশের কাছে দেয়া জবান বন্দীতে কলেজছাত্রী সোনিয়া ২৬ নভেম্বর তার স্বামী তাদের বাড়িতে কেরোসিন ছিটিয়ে তার শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার রামপ্রসাদ ধাওয়া গ্রামের রজব আলীর ছেলে মন্টুর আকনের সঙ্গে মোবাইলে পরিচয় হয় সোনিয়া আক্তারের। ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে গত কোরবানির ঈদের আগে তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের পর প্রায় এক মাস অন্যত্র অবস্থান করে পিরোজপুরে ভান্ডারিয়ায় গ্রামের বাড়ি সোনিয়াকে নিয়ে যায় তার স্বামী মন্টু আকন।
সোনিয়ার বাবা ভ্যান চালক মোজাহার শিকদার বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, স্বামীর বাড়ি গিয়ে তার মেয়ে সোনিয়া জানতে পারে মন্টুর আগে একটি বিয়ে এবং ওই ঘরে সন্তান আছে। কিন্তু মন্টু তাকে আগে এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। এতে তাদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।
‘একপর্যায়ে সে শ্বশুর বাড়ি ভান্ডারিয়া থেকে বাপের বাড়ি বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার গোপালপুরে আসতে চেষ্টা চালায়। এর ফলে ২৬ নভেম্বর মন্টু ক্ষুব্ধ হয়ে ঘরে থাকা কেরোসিন ছিটিয়ে সোনিয়ার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে তার শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে যায়। পরে সোনিয়ার স্বামী মন্টু আকন ও তার পরিবার তাকে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোনিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।’
সোনিয়ার মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আগুনে সোনিয়ার শরীরের ৯০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দিলে আমার বৃহস্পতিবার তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। এসময় স্ত্রীকে রেখে তার স্বামী মন্টু আকন চলে যায়। গত দুইদিন ধরে আমার মেয়েটি বাড়িতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে মারা গেছে। আমি মন্টুর ফাঁসি চাই।’
কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমশের আলী বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে জানান, গত ২ ডিসেম্বর পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ সোনিয়া নামে এক গৃহবধূর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা হয়েছে বলে একটি বার্তা পাঠায়। আমরা সেই বার্তা অনুযায়ী শুক্রবার দুপুরে মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার মৃত্যুকালীন একটি জবানবন্দি গ্রহণ করি।
‘জবানবন্দিতে অগ্নিদগ্ধ মেয়েটি তার স্বামী মন্টু তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেন।’
বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে বিকালে নিহতের পরিবারের কাছে তার লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এঘটনায় সংশ্লিষ্ট পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানায় মামলা হবে বলে জানান ওসি।
তবে এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মন্টু আকনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
ভান্ডারিয়া থানায় ওসি মো. কামরুজামান বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে সোনিয়ার স্বামী মন্টু গা’ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা করছে।’