সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পূজা আর পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সাঙ্গ হলো দুবলার চরে আয়োজিত এবারের রাস মেলা।
বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) ভোর থেকেই সমুদ্র সৈকতে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনায় বসেন পূণ্যার্থীরা।
ভরা পূর্ণিমার টানে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রে জোয়ার শুরু হয়। সেই জোয়ারের পানি ছুঁয়ে যায় পূণ্যার্থীদের। এরপর গঙ্গাদেবীকে স্মরণ করে স্নানে নামেন তারা।
রাসমেলাকে উপলক্ষ করে শত শত নৌকা-ট্রলার ও লঞ্চের সমাগমে পুরো দুবলার চর এলাকা আলোর ঝলকে সজ্জিত হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ধর্মনুরাগী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা মেলায় এসে আনুষঙ্গিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করেছেন।
মেলায় বাদ্য, নৃত্য, গীত ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। বসেছিল কুটির শিল্প, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ফল-ফলাদি, মিষ্টান্ন, মনোহারির সামগ্রীর পসার।
বৃহস্পতিবার ভোরে সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, দলে দলে পূণ্যার্থীরা প্রদীপ জ্বালিয়ে নানা রকম ফল-ফুল, মিষ্টান্ন নিয়ে পূজায় বসে সাগরকে সামনে রেখে কৃষ্ণপূজার সঙ্গে দেবতা নীল কমল আর গঙ্গাদেবীর আরাধনায় নিমগ্ন হয়েছেন।
কিছুক্ষণ পর সাগরের ঢেউ তাদের ছুঁয়ে যেতেই সঙ্গে থাকা ফুল-ফলগুলো পানিতে ভাসিয়ে দেন। এরপর ঢাক-ঢোল-কাসা-মন্দিরা বাজিয়ে ভজন-কীর্তনে নিনাদিত হয়ে ওঠে চারপাশ। পাপমোচন করতে সমুদ্রস্নানে নামনে পূণ্যার্থীরা।
এ সময় তারা সবার মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনা করেন। পূজা-অর্চনার ফাঁকে কোথাও কোথাও সূর্যাস্তের পর সাগরকে সাক্ষী করে আকাশের বুকে ফানুস উড়িয়ে দেওয়া হয়। দেশি পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের সমাগমও ছিল লক্ষ্যণীয়।
প্রথমবার দুবলার চরে পূজা দিতে আসা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তারাপদ মণ্ডল বলেন, গঙ্গামায়ের করুণা পেতে এসেছি। সবার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেছি। আগামী বছর আসার জন্যও মানত করেছি। এবার কয়েক প্রকার ফল দেবদেবীর জন্য উৎসর্গ করেছি।
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসা মিঠুন রায় বলেন, বহু বছর ধরে এই রাস উৎসবের কথা শুনে আসছি। এবার আসার সুযোগ হলো। মানত করেছি। পূজো দিয়েছি। সুযোগ থাকলে পরের বছর পরিবার নিয়ে আসব।
সূর্যোদয়ের পরপরই শেষ হয় পূণ্যস্নান পর্ব। এরপরেই তীরে ভিড়ে থাকা ট্রলার, লঞ্চগুলোর মধ্যে ফেরার তাড়া লক্ষ্য করা যায়। ফিরতি পথে দর্শনার্থীরা খুব সকালেই সমুদ্র তীরে শুটকি মাছসহ নানা ধরনের পণ্যের দোকান পেয়ে যান। শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকেই।
এর আগে বুধবার মেলার মূল স্থানটিকে ঘিরেও দর্শনার্থীদের কেনাকাটার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় শুটকি পল্লীর শুটকিসহ মেলায় আসা বাহারি পণ্য বেচা-কেনার ঢল নেমেছিল। দূর দূরান্ত থেকে আসলেও বিক্রেতারা বেশ খুশিই ছিলেন।
বরিশালের বরগুনা থেকে আসা কসমেটিকস দোকানদার রনি বলেন, মেলাকে ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড় মূলত একদিনের। তবুও লোক সমাগম বেশি হয় বলে আমাদের ভালো অঙ্কের লাভ হয়। সে কারণেই কষ্ট স্বীকার করে এখানে আসি।
দুবলার চরে যাওয়া আসার পথে প্রকৃতির অকৃপণ হাতের সৃষ্টি ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ঘরে ফিরতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। তাদের ফিরে যাওয়ায় দুদিনের জন্য ‘লোকালয় হয়ে জেগে ওঠা’ নীরব সুন্দরবন আবারও নীরব হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয় জেলেরা।