বাগেরহাটে একটি হত্যা মামলায় তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ ১৯ বছর পর রোববার (০১ নভেম্বর) সকালে বাগেরহাট দায়রা জজ আদালতে বিচারক মিজানুর রহমান খান এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন সাজার পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্তদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও এক আরও এক বছরের সশ্রম করাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত মামলা থেকে ৬ জনকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এছাড়া মামলা চলাকালে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ও প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হওয়ায় এজাহার নামী তিন জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মৌভোগ গ্রামের লিয়াকত শেখ, একই গ্রামের কাশেম শেখ এবং যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার সিদ্ধিপাড়া কাজীপাড়া গ্রামের ইমাদুল ইসলাম ওরফে লিটন।
এদের মধ্যে লিয়াকত শেখ রায় ঘোষণার সময় আদালতের উপস্থিত ছিলেন। অপর দু’জন মামলা চলাকালে আদালত থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপন করেন।
মামলা চলাকালে বিভিন্ন সময়ে নিহতরা হলেন- খলিল শেখ, গণেশ পোদ্দার ওরফে সোহেল ওরফে তপন এবং মকবুল ওরফে সজীব।
মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া ছয় জন হলেন- আব্দুর রশিদ, মোহন, সাঈদ, মনি, সবুজ ওরফে শ্যামল এবং নারায়ণ মণ্ডল। এদের বাড়ি মৌভোগ ও ডহর মৌভোগ গ্রামে।
১৯৯৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার নলধা-মৌভোগ ইউনিয়নের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার মোড়লের ছোট ভাই তুষার মোড়লকে (২৮) স্থানীয় মানসা বাজারে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিহত তুষার মোড়ল ১৯৯৬ সালের ২২ মে ডহর মৌভোগ গ্রামে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির এক কনস্টেবলসহ জোড়া হত্যা মামলার সাক্ষী ছিলেন। কথিত চরমপন্থিরা ওই জোড়া খুন করে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
এজাহার অনুযায়ী ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর রাতে ফকিরহাট উপজেলার মানসা বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় তুষার মোড়লের উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালানো হয়। তারা তুষারকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। নিষিদ্ধ চরমপন্থি সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি এমএল-এর নামে স্লোগান দিয়ে এলাকা ত্যাগ করার সময় স্থানীয় জনতা ধাওয়া করে লিয়াকত শেখকে আটক করে।
এই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার মোড়ল বাদী হয়ে পরদিন ৩ সেপ্টেম্বর ফকিরহাট থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৭-৮ জনকে আসামি করে ফকিরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
১৯৯৭ সালের ৫ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন উপ পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুনানিকালে আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
মামলার রাষ্ট্রপক্ষে কৌশলী পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোহম্মদ আলী রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামি পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. জাহীদ হোসেন ও অ্যাড. আব্দুর রাজ্জাক এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।