প্রচ্ছদ / খবর / তেল কয়লায় একাকার, সুন্দরবন চমৎকার !

তেল কয়লায় একাকার, সুন্দরবন চমৎকার !

তেলবাহী ট্যাংকারের পর এবার সুন্দরবনের কাছে কয়লা নিয়ে কার্গো ডুবি। বনের কাছে রামপালে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরোধীতার মাঝে মঙ্গলবার রাতের ওই ঘটনা নতুন করে ভাবাচ্ছে সবাইকে।

এদিকে ঘটনার পর প্রায় ৮৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও শনিবার সকাল পর্যন্ত কায়লাবাহী কার্গোটি উদ্ধর কাজ শুরু হয় নি।

ঘটনাস্থলে থাকা মংলা থানার জয়মনির ঘোল নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নজরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া কর্গোটি উদ্ধারে কোন প্রকার কার্যক্রম শুরু হয় নি। বর্তমানে যেখানে পুলিশ ও বন বিভাগের কয়েকজন কর্মী ছাড়া আর কেউই নেই।

মঙ্গলবার রাতে মংলা সাইলো (খাদ্য গুদাম) সংলগ্ন বিউটি মার্কেট এলাকায় প্রায় ৫শ’ ১০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় এম.ভি. জি আর রাজ।

পরিবেশ বিষয়ক সংগঠণসহ রামপাল তাপবিদ্যৎ স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দলন চালিয়ে আসারা ব্যাক্তি ও সংগঠনরা ধারাবাহিক ভাবে সুন্দরবনে ঘটতে থাকা জাহাজ ডুবির ঘটনাকে বনের জন্য একটি সতর্ক বার্তা হিসাবে দেখছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে নিন্দার ঝড়।

ঘটনার পর আগের ধারাবাহিকতায় বন বিভাগের মামলা দায়ের ও তদন্ত শুরু করেছে। তবে এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার কারে তানিম আশরাফ নামে এক ব্যক্তি লিখেছেন, ‘ইনডেমনিটি আইন করে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চলাচলকারী মালবাহী জাহাজগুলোকে সুরক্ষা দেওয়া হোক, যেন বন বিভাগ মামলা করতে না পারে।’ বিদ্রুপের স্বর ফুটে ওঠা ওই স্টাটাসে তিনি প্রশ্ন করে আরো লিখেছেন, জাহাজ চলাচল করলে জাহাজডুবি হবে না তো কি বাসডুবি হবে?

fB-statasগত ডিসেম্বরে তেলবাহী ট্যাঙ্কার ডুবির পর সরেজমিন সুন্দরবনে আসা গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দীন খান তার ফেসবুকে লিখেছেন, আসুন সুন্দরবনের জানাজার প্রস্তুতি নেই! এই প্রাকৃতিক বর্মকে ধীরে ধীরে হত্যার সব আয়োজন সম্পন্ন হচ্ছে। একদিকে জলবায়ূ পরিবর্তনের নামে দাতাগোষ্ঠীর দুয়ারে দুয়ারে অর্থের জন্য ধর্না দেওয়া, আরেকদিকে জলাবনটি ধ্বংস করা! অথচ এই জলাবনের কার্বন নিঃসরণ ঠেকানোর ক্ষমতা অন্য ভূমিভিত্তিক বনের চাইতে ৪-১৮ গুন বেশী। দ্বৈততা আর কাহাকে বলে! তবে একটা বিষয়ে তাদের দ্বৈততা নেই আর তা হলো টাকা! সুন্দরবনের ধ্বংসেও দখলকরা জমির সাথে টাকা আর জলবায়ূ সংকটের দোহাই দিয়েও নিজের পকেটে টাকা!

কয়লার ক্ষতিকর দিক বিষয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সত্তার জানান, কয়লায় সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইডসহ ক্ষতিকর উপদান থাকে। এগুলো বনের জন্য ক্ষতিকার।

তিনি বলেন, সুন্দরবনের নদীতে তেল, সার, কয়লাসহ যেকোন ধরণের পণ্যবাহী নৌযান চলাচলই ঝুঁকিপূর্ণ। দুর্ঘটনা ঘটে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়।

Kargo-Barj-Dubiবাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে পশুর নদীর এই নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন কয়লা প্রচুর প্ররিমানের কয়লা পরিবহণ হবে। তখন দুর্ঘটনার ঘটনার আশঙ্কাও বাড়বে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যেও ওপর এর প্রভাব পড়বেই। আমরা পুরো বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।’

সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়লাবাহী জাহাজডুবির এই ঘটনা আমাদের জন্য একটা সর্তক বার্তা। রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর পাঁচশতাধিক জাহাজ সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে চলাচল করবে।’

‘দিন-রাত ২৪ ঘন্টা বনের ভেতর দিয়ে এভাবে জাহাজ চলাচলে নদীতে কয়লা, তেল-মবিল ও বর্জ্য পড়বে, নৌযানের হর্ণের শব্দ, রাতে সার্চ লাইটের আলো প্রাণীকুলের অভয় অরন্য নষ্ট করবে।’

তেল-গ্যাস-খনিক সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাগেরহাট ইনফো ডটকমকে বলেন, ‘ সুন্দরবন সরকারের কাছে যে কতটা গুরুত্বহীন বারবার এসব ঘটনা থেকে তাই বোঝা যাচ্ছে। এগুলো তো অনেক ছোট জাহাজ, এগুলোই সরকার যে ভাবে ডিল করছে তাতেই বোঝা যায় যখন পাওয়ার প্লান্ট হবে তখন কি হবে।’

‘সরকার সুন্দরবন রক্ষা করবে বলে সারক্ষণ যে মিথ্যাচার করছে, তার বোঝা যায় একের পর এক জাহাজ ডুবি হচ্ছে কিন্তু সরকার কিছুই করতে পারেনা। পরিবেশ মন্ত্রনালয় এবং অন্যদের যদি এ বিষয় নিয়ে নুন্যতম দায়িত্ব বোধ থাকত তবে এসব বিষয়ে তারা উদ্যোগ গ্রহণ করত।’

এর সব কিছু থেকে বোঝা যায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে সরকার যে সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে গুলো খুবই ফাঁপা বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসাবে উদযাপনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে “তেল কয়লায় একাকার, সুন্দরবন চমৎকার। ভিজিট সুন্দরবন বিফোর দ্য বুলডোজার কাম” নামে একটি স্লোগান।

৩০ অক্টোবর :: নিউজ রুম,
বাগেরহাট ইনফো ডটকম।।
এস/আইএইচ/এনআরএ/বিআই/

About বাগেরহাট ইনফো নিউজ